৪১ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গরমে গলে গেছে সড়কের পিচ

News Desk

৪১ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গরমে গলে গেছে সড়কের পিচ. DShakainlight.com

চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে চরম তাপপ্রবাহ। শুক্রবার বিকেল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস—যা চলতি মৌসুমে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ভয়াবহ গরমে মানুষের জীবনযাত্রা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের রাস্তায় পিচ গলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় গরম হয়ে উঠছে আরও কষ্টদায়ক। এদিন বাতাসে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ২৪%। তার আগের দিন, বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস—দুই দিন পরপর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করায় চুয়াডাঙ্গার জনজীবনে দেখা দিয়েছে এক ধরনের তাপ-সংকট।

শহরের রাস্তায় দেখা গেছে, রোদের তাপে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। কোর্টরোড ও বড়বাজার এলাকায় সড়কে সাদা-সাদা আঠালো গলিত পিচ নজরে পড়েছে। ফলে যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, “আমরা বিভিন্ন স্থানে বালু ছিটিয়ে দিচ্ছি যাতে যানবাহন চলাচলে সমস্যা না হয়। তবে যদি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

এই ভয়াবহ গরমে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ একপ্রকার বন্দিজীবন পার করছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবচেয়ে বিপদে রয়েছেন রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিকসহ খোলা রোদের নিচে কাজ করা মানুষ। শহরের অলিগলিতে লোক চলাচল কমে গেছে, বাজারে বিক্রিও কমেছে।

গরমের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ছোট পরিসরেও। ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা বলেন, “ভাজা বাদাম বিক্রি করেই সংসার চলে। কিন্তু এই গরমে রাস্তায় লোকই নেই, বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।” এক মুরগি খামারি বলেন, “গরমে মুরগি মারা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান চালাতে পারছি না। পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে—সোনালি, লেয়ার, ব্রয়লার সব জাতের মুরগি মারা যাচ্ছে।”

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা অতিক্রম করলেই হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি জনগণকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বেশি পানি ও তরল খাবার খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তাপপ্রবাহ আগামী ১৩ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক বলেন, “বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে জরুরি সতর্কতা জারি হতে পারে।”

এমন পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গার জনজীবনে যেন ‘প্রাকৃতিক লকডাউন’ নেমে এসেছে। মানুষ ঘরবন্দি, কাজ বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা—সব মিলিয়ে এক দমবন্ধ গরমের নগরী যেন হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা।

Leave a Comment

Footer Section