প্রথম মেয়াদের সফলতার প্রমাণ দিতে চেয়ে গত মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্টক মার্কেটের প্রসঙ্গ টানেন।
আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, আমি এমন একটি দেশ হস্তান্তর করেছি যেখানে স্টক মার্কেট ছিল মহামারির আগের চেয়েও উঁচু ৯ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন। এটি একটি অসাধারণ সাফল্য ছিল।
দ্বিতীয় মেয়াদে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। স্টক মার্কেট দুর্দান্ত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি এক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে তিনি বলেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে যখন শেয়ারবাজার ধসে পড়তে শুরু করল মূলত ট্রাম্পের শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই আশঙ্কায় তখন তার সুর বদলাতে দেখা যায়।
আপনি আসলে স্টক মার্কেটের দিকে নজর দিতে পারবেন না রবিবার ফক্স নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন। আপনি যদি চীনের দিকে তাকান তারা ১০০ বছরের পরিকল্পনা করে। আর আমরা করি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে।
সোমবার বাজার আরও নিচে নেমে যায় যা ট্রাম্পের নির্বাচনের পর থেকে হওয়া সব লাভ মুছে ফেলে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের এটি ছিল সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে খারাপ দিন। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি কমে যার ফলে নাসডাক একদিনে এক ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। ২০২২ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় পতন।
সোমবার ট্রাম্পের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে করা ২০টিরও বেশি পোস্টের মধ্যে বাজার পতন নিয়ে কোনও মন্তব্য ছিল না।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর শিল্পপ্রধান নেতারা তার আমেরিকা ফার্স্ট অর্থনৈতিক এজেন্ডা যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক। নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ ও আমেরিকান জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি। এসবের প্রতি সাড়া দিয়ে ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা হাজার হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি করবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেন।
হোয়াইট হাউস আরও উল্লেখ করেছে যে, বিভিন্ন সমীক্ষায় ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এই সমীক্ষাগুলো ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপের আগে পরিচালিত হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রায়ই স্টক মার্কেটকে তার প্রেসিডেন্সির সফলতা পরিমাপের সূচক হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেন, স্টক মার্কেট সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এটি এমনিই ঘটে না!
যদিও তার প্রথম মেয়াদে স্টক মার্কেটের ওঠানামা ছিল, বিশেষ করে মহামারির সময় একবার বড় ধাক্কা খেয়েছিল, কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাজার প্রায় ৭০% বৃদ্ধি পায়। বাইডেনের প্রেসিডেন্সিতেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন তখন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক মাত্র ৩% বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু তিনি একে ট্রাম্প এফেক্ট বলে অভিহিত করেন।
তবে তার নীতিগুলো বাস্তবায়িত হতে শুরু করার পর, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা দেয়। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫% শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর আরও ১০% শুল্ক আরোপ করেন তখন বাজারের নিম্নমুখী ধারা আরও তীব্র হয়।
ট্রাম্প যদিও কিছু শুল্ক প্রত্যাহার করেন, তবে অনেকগুলো বহাল থাকে এবং তিনি এপ্রিল মাসে আরও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে এবং অন্টারিওর প্রিমিয়ার ঘোষণা করেছেন যে, ১৫ লাখ আমেরিকান গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের দাম ২৫% বৃদ্ধি করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক এই সপ্তাহেই কার্যকর হওয়ার কথা, যা দেশীয় উৎপাদকদের জন্য ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে।
লাজার্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সিইও এবং ওবামা প্রশাসনের বাজেট প্রধান পিটার ওরজাগ সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে বর্তমানে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। যা বিনিয়োগকারী ও কর্পোরেট বোর্ডরুমের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে। চীনের সঙ্গে উত্তেজনা অনেকটা বোধগম্য, কিন্তু কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপের সঙ্গে কেন এই টানাপড়েন, সেটাই অবাক করার মতো বিষয়।
ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে, তার শুল্কনীতির কারণে অর্থনীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের সময় লাগবে।
রবিবার পাম বিচ ফ্লোরিডায় তার বাড়ি থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি শুল্ক নীতিই আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন হতে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশকে আবার সমৃদ্ধ করে তুলবে।