১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের শরীরে সাপের বিষ প্রবেশ করিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি—নাম টিম ফ্রিড। তাঁর অদ্ভুত এ অভ্যাস এখন চিকিৎসা ও বিজ্ঞান জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি সাপের কামড় প্রতিরোধে একটি ‘সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম’ হিসেবে কাজ করতে পারে, যা পৃথিবীর জন্য হতে পারে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার।
টিম ফ্রিড তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ৭০০ বারেরও বেশি সাপের বিষ প্রয়োগ করেছেন এবং ২০০ বারের বেশি সরাসরি কামড়ও খেয়েছেন। কেউটা, মাম্বাসহ বিশ্বের ভয়ঙ্করতম সাপগুলোর বিষ ছিল তাঁর এই “চিকিৎসা চেষ্টার” অংশ।
প্রাথমিকভাবে তিনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতেই বিষ শরীরে নেওয়া শুরু করেছিলেন, কারণ তিনি নিজেই একজন সাপ ধরার কর্মী ছিলেন। পরে এটি পরিণত হয় একটি অভ্যাসে এবং মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখার দৃঢ় উদ্দেশ্যে।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্রিড জানান, “আমি চাই না কেউ মরে যাক। আমি চাই না কারও অঙ্গ হারিয়ে যাক। আমি চাই না কেউ নিজের জীবিকা হারাক শুধু সাপের কামড়ে।”
তাঁর কথায়, “এটা আমার রোজকার অভ্যাস হয়ে ওঠে এবং আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাই, সেই সব মানুষের জন্য—যারা হয়তো আট হাজার মাইল দূরে থাকে, কিন্তু সাপের কামড়ে মারা যায়।”

তবে সব সময় বিষয়টি নিরাপদ ছিল না। একবার পরপর দুটি কেউটার কামড় খেয়ে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে যান। তবে সেখান থেকে ফিরে আসেন আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, টিম ফ্রিডের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা একাধিক প্রজাতির সাপের বিষ প্রতিরোধে সক্ষম। বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম সাধারণত নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের জন্য প্রযোজ্য হয় এবং দেশভেদে কার্যকারিতায়ও পার্থক্য থাকে।
যেমন—ভারতে প্রস্তুতকৃত অ্যান্টিভেনম শ্রীলঙ্কার একই প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর নয়। কিন্তু ফ্রিডের শরীর থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি এ ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পারে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
বর্তমানে ঘোড়ার মতো প্রাণীর শরীরে অল্প মাত্রায় বিষ প্রয়োগ করে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করা হয়, যা থেকে পরে অ্যান্টিভেনম তৈরি হয়। কিন্তু ফ্রিড নিজেই রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন একটি দিক উন্মোচন করেছেন।
এই ‘সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম’ যদি সফলভাবে প্রয়োগযোগ্য প্রমাণিত হয়, তবে এটি সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।