শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে: শাহবাজ শরিফ

News Desk

শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে: শাহবাজ শরিফ. Dhakainlight.com

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের হামলায় নিহত নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা আমাদের শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেব।” সম্প্রতি পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩১ জন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

এই হামলার সূত্রপাত ঘটে ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে ভারত দাবি করে, তারা সীমান্তের ওপারে ৯টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তানের দাবি ভিন্ন। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের হামলায় মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জলবিদ্যুৎ বাঁধসহ বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব আহমেদপুর, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, মুরিদকে, শিয়ালকোট ও শাকারগড়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিলাল মসজিদসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নীলম-ঝিলাম জলবিদ্যুৎ বাঁধে বড় ধরনের ক্ষতি হয়।

পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল। আইএসপিআরের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের আকাশসীমার কাছাকাছি এসে ভারতীয় বাহিনীর তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯, একটি সু-৩০ এবং একটি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকেও বক্তব্য এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি বন্ধ করতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।” তিনি জানান, ভারতীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তের ছয় কিলোমিটার ভেতরেও অভিযান চালিয়েছে।

ভারত দাবি করেছে, তারা জইশ-ই-মুহাম্মদ, লস্কর-ই-তাইয়েবা ও হিজবুল মুজাহিদীনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ব্রিফিংয়ে এসব হামলার স্থান ও ছবি দেখানো হয়।

একই সময়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সশস্ত্র বাহিনীকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্ণ অনুমোদন দেন। রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “ভারত ভেবেছিল আমরা পিছু হটব, কিন্তু তারা ভুলে গেছে আমরা বীরের জাতি। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা লড়ব।”

এই হামলার পর সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। ভারতের সেনাবাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। একজন ভারতীয় সেনাও মারা যান।

ঘটনার জেরে পাকিস্তান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আন্তর্জাতিক মহল দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা প্রশমনে আহ্বান জানালেও পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।

এই ঘটনার পর পুরো উপমহাদেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের সামরিক সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়া, যা গোটা অঞ্চলের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Leave a Comment

Footer Section