এক সময় বাগান ধরে ব্যবসায়ীদের কাছে আম বিক্রি করতে বাধ্য হতেন রাজশাহীর আমচাষিরা। বিক্রির পরে পাওনা টাকা পেতে হতো ধর্ণা, আর ব্যবসা খারাপ গেলে সেই টাকাও পাওয়া যেত না। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে রাজশাহীর আম বিপণনব্যবস্থা। এখন চাষিরাই বাগানে দাঁড়িয়ে সরাসরি বিক্রি করছেন আম, পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতার কাছে। এতে যেমন দাম পাচ্ছেন বেশি, তেমনি আড়তদার বা দালালের ওপর নির্ভর করতেও হচ্ছে না।
রাজশাহীর পুঠিয়ার আমচাষি মাহবুব ইসলাম জানান, একসময় নিজের বাগানের আম ছুঁতেও পারতেন না। বাধ্য হয়ে বাগান বিক্রি করে দিতেন ব্যবসায়ীদের কাছে। এখন নিজের আম নিজেই বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “লস হলেও আমার, লাভ হলেও আমার। এখন আর কারও কাছে জিম্মি থাকতে হয় না।”
একই অভিজ্ঞতা বাঘার চাষি নজরুল ইসলামেরও। প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেন তিনি। কয়েক বছর আগেও আড়তদারদের যা খুশি দামে আম বিক্রি করতে হতো। টাকাও সময়মতো মিলত না। এখন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে আম পাঠিয়ে দেন। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই বিকল্প পদ্ধতি তাঁদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
তরুণ উদ্যোক্তারা এখন রাজশাহীর আম বিপণনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। ফেসবুক পেজ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাঁরা রাজশাহীর বিশুদ্ধ আম সরবরাহ করছেন দেশজুড়ে। কেউ কেউ ১০০ টনের মতো আম কুরিয়ার করে পাঠিয়েছেন গত বছর। তরুণ উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন জানান, ক্রেতারা এখন সরাসরি বাগানে গিয়ে আম কিনে নিচ্ছেন। চাষিদের আর বাজারে বসে থাকতে হয় না।
রাজশাহীর বানেশ্বর হাট, বাঘা, মোড়ে মোড়ে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি হওয়া আম এবং অনলাইন বিপণন মিলে এক নতুন চিত্র ফুটে উঠেছে। কেবল হাটে নয়, এখন প্রতিটি মোড়েই তৈরি হয়েছে বিক্রির সুযোগ। অনেক যাত্রীও আম কিনে নিচ্ছেন সরাসরি রাস্তা থেকে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা জানান, বর্তমানে আমচাষিরা আগের মতো দুশ্চিন্তায় থাকেন না। আমের অনলাইন বিপণন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছে। এ বছর রাজশাহী থেকে ২০০ টন আম বিদেশে রপ্তানির চুক্তিও হয়েছে বলে তিনি জানান। রাজশাহীতে আমের বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তির এই ব্যবহার রাজশাহীর আম চাষে এক বিপ্লব এনে দিয়েছে। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও যুক্ত হচ্ছে নতুন সম্ভাবনার এক অধ্যায়।