ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দুই দেশকেই এমন এক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু বহুদিনের বিরোধ, তবে ২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার পর থেকে পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। বর্তমানে দুই দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলছে, যা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন হলো, যুদ্ধ যদি সত্যিই বেধে যায়, তবে তারা কি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে?
ভারতের হাতে বর্তমানে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাদের একমাত্র আনুষ্ঠানিক পারমাণবিক নীতিমালা অনুযায়ী, ভারত কখনোই প্রথমে পারমাণবিক হামলা চালাবে না। অর্থাৎ, তারা কেবল তখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যখন তাদের নিজ ভূখণ্ড বা বিদেশে মোতায়েন বাহিনীর ওপর পারমাণবিক হামলা হবে। এই নীতিকে বলা হয় ‘No First Use’। তবে, ভারতের নীতিমালায় দুটি ব্যতিক্রম রয়েছে—যদি কেউ ভারতের ওপর রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে তারা পারমাণবিক জবাব দিতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতা এই নীতির পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের হাতে রয়েছে অন্তত ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। তারা কোনোদিনই স্পষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করেনি, বরং নীতিগত অস্পষ্টতা বজায় রেখেছে, যা কৌশলগত চাপ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা খালিদ কিদওয়াই চারটি শর্ত বা ‘রেড লাইন’ নির্ধারণ করেছিলেন, যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে। সেগুলো হলো: পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড হারানো, সামরিক শক্তির বড় ক্ষতি হওয়া, অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়া, বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়া।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান তাদের অবস্থান কিছুটা বদলেছে। ২০২৪ সালে খালিদ কিদওয়াই স্পষ্টভাবে বলেছেন, পাকিস্তানের ‘প্রথমে পারমাণবিক হামলার’ কোনো নীতি নেই। তবে, ২০১১ সাল থেকে পাকিস্তান স্বল্পপাল্লার ‘ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার উইপন’ তৈরি করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সীমিত আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে যুদ্ধের সময় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সবমিলিয়ে, দুই দেশের নীতিমালা যতই আত্মরক্ষার কথা বলুক, বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আবেগ, প্রতিশোধ এবং চাপের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত কতটা কৌশলগত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারমাণবিক যুদ্ধ হবে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং আত্মঘাতী—যা শুধু দুই দেশ নয়, গোটা অঞ্চল এবং বিশ্বকেই ভয়াবহ পরিণতির মুখে ফেলতে পারে।