যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা কানাডা-মেক্সিকোর 

admin2

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা কানাডা-মেক্সিকোর , Dhakainlight.com

শুধুই মৌখিক হুমকিতে আর আটকে রইল না বিষয়টা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক মাসের চূড়ান্ত সময়সীমার মধ্যেও গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র বের করতে পারল না মেক্সিকো ও কানাডা। মঙ্গলবার থেকেই ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দিলেন। জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটসহ শিল্পমহলের একাধিক বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও বাজার সমীক্ষা সংস্থা বলছে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ আরেক রকম যুদ্ধ। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।

বিশেষজ্ঞমহলের দাবি, ট্রাম্পের দ্বিতীয় জমানায় বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে। মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে সেই চক্র যেন পূর্ণ হলো।

ইটের বদলে পাটকেল ছুড়তে তাঁরা যে পিছপা হবেন না, তা বুঝিয়ে দিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের দেশে আসা ৩০ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ হচ্ছে সেদিন থেকেই। বাকি যে ১২৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৫০০ কোটি কানাডীয় ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা আমদানি করে, তার ওপরেও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে ২৫ মার্চ থেকে।

চুপ করে বসে নেই মেক্সিকোও। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়ে, তাদের রপ্তানির ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। শিগগিরই ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাম মঙ্গলবার সকালেই সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সেদিন থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর সমহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের প্রথম ধাক্কাতেই মেক্সিকোর মুদ্রা পেসোর মান এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, কানাডা ও মেক্সিকোর তুলনায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে চীনের পাল্টা ব্যবস্থায়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভুট্টা, সামুদ্রিক খাবারসহ একাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক কার্যকর করা হবে অবিলম্বে। পাশাপাশি ১০টি মার্কিন কোম্পানিকে আন-রিলায়েবল (নির্ভরযোগ্য নয়) এনটিটি লিস্টে পাঠানোর পাশাপাশি আরও ১৫টি কোম্পানিকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় ঢুকিয়ে বেইজিংয়ে তাদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে এসব কোম্পানির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছেড়ে কথা বলছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। কদিন আগেই ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটকে ট্রাম্প এই বলে একহাত নিয়েছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিতই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলার জন্য। তাদের ওপরও ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। সরকারি ঘোষণা হবে শিগগিরই, যার পাল্টা হিসেবে কড়া ভাষায় ট্রাম্পকে সাবধানবাণী শুনিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ধরনের অন্যায্য কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে, এই বাণিজ্যযুদ্ধ রোধের কফিনে সম্ভবত শেষ পেরেক পোঁতা হবে আগামী ২ এপ্রিল। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, সেদিন থেকে গাড়ি-সেমিকন্ডাক্টর চিপ, ওষুধসহ সব ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে। অর্থাৎ যে দেশ মার্কিন পণ্যে যতটা শুল্ক আরোপ করে, সেই দেশের পণ্যে ততটাই শুল্ক আরোপ করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুল্কযুদ্ধ শুরু হলো। ইতিমধ্যে বিশ্বের আর্থিক বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আবার মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনই দুর্বল হবে বিশ্ব অর্থনীতির ভিত। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ আবারও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়তে পারে। বন্ধ হতে পারে নীতি সুদ কমানোর পথ। ধাক্কা খেতে পারে আর্থিক বৃদ্ধি।


Leave a Comment

Footer Section