ভারত-পাকিস্তানের সমরসজ্জা: উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালছে আধুনিক অস্ত্র

News Desk

ভারত-পাকিস্তানের সমরসজ্জা: উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালছে আধুনিক অস্ত্র. Dhakainlight.com

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক বৈরিতা নতুন করে জ্বলছে সাম্প্রতিক কাশ্মীর হামলার পর। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নয়াদিল্লি সরাসরি ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দু’দেশের মধ্যে সীমিত সংঘাত যে কোনো সময় বড় ধরনের যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই নিজেদের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে।

রাফাল বনাম জে-১০: আধুনিক যুদ্ধবিমানের পাল্লা

২০১৯ সালের সংঘাতের পর ভারত ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনেছে ফ্রান্স থেকে। এই বিমানগুলো আকাশ থেকে আকাশে মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম, যা শত্রু বিমানে দূর থেকে আঘাত হানতে পারে। আরও ২৬টি রাফাল কেনার চুক্তি করেছে ভারত, যার মধ্যে কিছু নৌবাহিনীর জন্য।

অন্যদিকে, পাকিস্তান চীন থেকে ধাপে ধাপে কিনছে অত্যাধুনিক জে-১০ যুদ্ধবিমান। এর সঙ্গে পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত থাকায় এটির ক্ষমতা রাফালের কাছাকাছি। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের হাতে রয়েছে কমপক্ষে ২০টি জে-১০।

আকাশ প্রতিরক্ষায় এস-৪০০ ও এইচকিউ-৯

২০১৯ সালের সংঘাতে আকাশ প্রতিরক্ষার দুর্বলতা সামনে এসেছিল। এর পর ভারত রাশিয়া থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে, যা মোবাইল ও কার্যকর হিসেবে স্বীকৃত।

পাকিস্তান চীনের এইচকিউ-৯ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ করেছে, যা রাশিয়ার এস-৩০০-কে ভিত্তি করে তৈরি। তবে এস-৪০০-এর তুলনায় এটি কিছুটা পিছিয়ে।

ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের যুগে নতুন কৌশল

এইবার সরাসরি যুদ্ধবিমান পাঠানোর পরিবর্তে ড্রোন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি। এতে পাইলটের ঝুঁকি কম এবং গোপন অভিযান চালানো সহজ হয়।

ভারত ইসরায়েল থেকে কিনছে হেরন মার্ক ২ ড্রোন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে হান্টার-কিলার প্রিডেটর ড্রোন। এগুলো নজরদারি ও আক্রমণ দুটোই চালাতে সক্ষম।

পাকিস্তান ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে বাইরাকতার টিবি-২ ও উন্নত আকিনচি ড্রোন সংগ্রহ করেছে, যেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে দুই পক্ষের প্রস্তুতি

পাকিস্তান সম্প্রতি ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করেছে। এগুলো চলমান সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ভারতের হাতে রয়েছে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও অগ্নি সিরিজের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।

চীনের ছায়া ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। ফলে চীনের ভূমিকাও এই উত্তেজনায় গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষকেই উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানালেও, তাদের আগ্রহ চীনা অস্ত্র ও প্রযুক্তির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে। কারণ, জে-১০ ও পিএল-১৫ এখনও সরাসরি কোনো যুদ্ধে পরীক্ষা হয়নি।

২০১৯ থেকে শিক্ষা না নিলে, বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী

২০১৯ সালের সংঘাতে দুই দেশ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সাবেক পাইলট কাইসার তুফায়েল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবার যদি সেই পরিস্থিতির চেয়ে এক ধাপ এগোনো হয়, তবে তা হতে পারে ভয়াবহ। কারণ, দুই পক্ষই এখন নিজেদের আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত মনে করছে।

রাজনৈতিক চাপে সামরিক সিদ্ধান্ত?

ভারতে অনেকেই ‘কঠোর জবাব’ চাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেনাবাহিনীকে ‘অভিযানের স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। পাকিস্তান বলছে, তাদের হাতে রয়েছে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ যে ভারত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবে সাবেক সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ কেউই চায় না। তবে দুর্ঘটনাবশত বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে যদি সংঘাত শুরু হয়, তবে তা রোখা কঠিন হয়ে পড়বে।

উপসংহার

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা নতুন নয়। কিন্তু ২০২৫ সালের এই পরিপ্রেক্ষিত আগের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক। আধুনিক অস্ত্র, রাজনৈতিক চাপ, এবং চীনা-পশ্চিমা প্রযুক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা—সবকিছু মিলে এই পরিস্থিতিকে করে তুলছে জটিল ও উদ্বেগজনক।

সেই উত্তাপ থেকে উত্তেজনা যেকোনো সময় বিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে।

Leave a Comment

Footer Section