ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা প্রশমনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সরাসরি সংলাপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদা আলাদা ফোনে কথা বলেন মার্কো রুবিও। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, রুবিও দুই দেশের নেতাদের সতর্ক করে বলেন, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ না করলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু শহরে বৃহস্পতিবার রাতে ড্রোন বিস্ফোরণের ঘটনার পর এই আলোচনাগুলো আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেনাবাহিনী একে পাকিস্তানের চালানো হামলা বলে সন্দেহ করছে। যদিও বিস্ফোরণের আগে রুবিও দুই দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেন।
ট্যামি ব্রুসের ভাষায়, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও দ্বিপক্ষীয় সংলাপ ও যোগাযোগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে দুই পক্ষকেই উৎসাহ দিয়েছেন।”
এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “আমি আশা করি ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ করবে।” তিনি সংকট নিরসনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান। তবে এখনো যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়নি।
এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র অটলভাবে পাশে থাকবে।” অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনায় রুবিও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ইসলামাবাদকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর। নয়াদিল্লি অভিযোগ তোলে যে, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এর জবাবে ভারত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতীয় পক্ষ বলছে, তারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও হামলা চালানোর দাবি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে গভীর সংকটে রূপ নিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।