দুই দিন ধরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের পর কুমিরে ভরা বোলিভিয়ার অ্যামাজন জঙ্গলের একটি জলাভূমি থেকে পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় বিমানটিতে ছিলেন এক পাইলট, তিনজন নারী এবং একটি শিশু।
জলাভূমিতে জরুরি অবতরণ, পাশে কুমিরের বাসা
বুধবার ছোট আকারের বিমানটি বাওরেস এলাকা থেকে ছেড়ে ট্রিনিদাদ শহরের দিকে রওনা হয়। উড্ডয়নের এক ঘণ্টার মাথায় প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা জানিয়ে পাইলট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরে জানা যায়, বিমানটি এক জলাভূমিতে জরুরি অবতরণ করেছে।
পাইলট পাবলো আন্দ্রেস ভেলার্দে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিমানটি কুমিরের একটি বাসার পাশে গিয়ে পড়ে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বিমান থেকে ছড়িয়ে পড়া জ্বালানি পানি দূষিত করায় কুমিরেরা খুব বেশি কাছে আসেনি।
জ্বালানির গন্ধে কুমির দূরে, পানির অভাবে বিপদে যাত্রীরা
ভেলার্দে জানান, “জ্বালানির গন্ধে ও দূষণে কুমিরেরা দূরে থাকে, তবে তারা রাতে গর্জন করত আর আমাদের ঘিরে রাখত। এটা খুব ভয়ের ছিল। কয়েকটি বিশাল আকারের সাপও ছিল।”
জ্বালানি দূষণের ফলে তারা পান করার জন্য উপযুক্ত পানি পাননি। এ অবস্থায় তারা চকলেট ও কাসাভা ময়দা খেয়ে বেঁচে ছিলেন।
বেঁচে ফেরা অলৌকিক অনুভূতি
যাত্রীদের একজন, মির্থা ফুয়েন্তেস বলেন, “আমরা সবাই কাঁদছিলাম খুশিতে, কারণ আমরা জীবিত ছিলাম। গায়ে ছিল কাটা-ছেঁড়া, কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম ঈশ্বরের কৃপায় আর পাইলটের বুদ্ধিমত্তায়।”
উদ্ধারে ব্যর্থতা, শেষে জেলেদের নজরে পড়া
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর বোলিভিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্স উদ্ধার অভিযানে নামে। কিন্তু প্রথম ৪৮ ঘণ্টা খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হয়। কয়েকটি বিমানের টহল সত্ত্বেও তারা ভুক্তভোগীদের খুঁজে পায়নি।
শেষমেশ শুক্রবার সকালে একদল জেলের নজরে পড়ে তারা। পরে বোলিভিয়া বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার তাদের উদ্ধার করে ট্রিনিদাদ শহরে নেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতির প্রতিক্রিয়া
বোলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে বলেন, “আমাদের দক্ষ উদ্ধারকর্মীদের প্রচেষ্টায় এখন পাঁচজনই জীবিত এবং আমরা তাদের নিরাপদে নিয়ে আসছি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।”
এটি শুধু একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়, বরং জীবনের প্রতি সংগ্রাম, সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকল।