বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র স্বীকৃতি, সহযোগীদের জন্য নির্ধারিত হলো নতুন শ্রেণিবিন্যাস

News Desk

বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের 'বীর মুক্তিযোদ্ধা'র স্বীকৃতি, সহযোগীদের জন্য নির্ধারিত হলো নতুন শ্রেণিবিন্যাস. Dhakainlight.com

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সংশোধিত অধ্যাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যাঁরা ওই সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলী ও খন্দকার মোশতাক আহমদের মতো মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুনির্দিষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, শুধু সরকারে থাকা সদস্যরাই নয়, ১৯৭১ সালের পুরো মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার স্বীকৃত বাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ সদস্যরাও এই স্বীকৃতির আওতায় আসবেন। তবে সরকারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, শিল্পী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়সহ যারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না, তাঁদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে আলাদা শ্রেণিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের পাঁচটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশে অবস্থানকারী পেশাজীবীরা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণপরিষদ সদস্যগণ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এর ফলে পূর্বে যাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন—যেমন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান—তাঁদের এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে—যার প্রেক্ষিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করে জানান, বঙ্গবন্ধু বা জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়নি। বরং নতুন অধ্যাদেশে তাঁদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত সংজ্ঞায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন তাঁরা, যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, অথবা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নিয়েছেন। এতে সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, মুক্তিবাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার এবং প্রবাসী সরকার স্বীকৃত বাহিনীগুলোর সদস্যদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অংশগ্রহণকারী এবং তাদের সহযোগীদের আলাদা আলাদা স্বীকৃতি দিয়ে এই অধ্যাদেশ জাতির ইতিহাসে একটি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত মূল্যায়ন যেমন নিশ্চিত হলো, তেমনি ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অবস্থানও সুস্পষ্ট হলো।

Footer Section