ফরিদপুরে স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে হত্যার দায়ে আসাদ ওরফে বাচ্চু শেখ নামের একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পুলিশি প্রহরায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ভাটিকান্দি গ্রামের মৃত মতিয়ার শেখের মেয়ে শান্তার সঙ্গে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কানাই মাতুব্বরের বাড়ি গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে আসাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের দিরাজতুল্লা মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে অবস্থিত ইদ্রিসের অ্যাগ্রো ফার্মে বসবাস করতেন এবং কাজ করতেন—শান্তা একজন শ্রমিক এবং আসাদ ছিলেন ফার্মের সুপারভাইজার।
২০২২ সালের ২৬ মে সকাল ১১টার দিকে ফার্মের আবাসিক কক্ষ থেকে শান্তার মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে আসাদ পলাতক ছিলেন। পরে ২৮ মে শান্তার মা জরিনা বেগম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে শান্তার স্বামী আসাদের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই আসাদকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
মামলার দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আজ আদালত আসাদ শেখের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া বলেন, এই রায় সমাজে যৌতুকের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা দেবে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, “এই রায় যুগান্তকারী। এর ফলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একধাপ অগ্রগতি সাধিত হলো।”
জানা গেছে, নিহত শান্তা ছিলেন আসাদ শেখের তৃতীয় স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীকেও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
এই রায় শুধুমাত্র একজন নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করল না, বরং যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন ঘটালো। সমাজে নারীদের সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় হিসেবে বিবেচিত হবে।