ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক উদ্বোধনী বক্তব্যে পাহাড় কাটার বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পাহাড় যেটুকু আছে, সেগুলোকে জাতীয় স্থান ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত। যাঁকেই বলি পাহাড় কাটবেন না, তারা বলে, ‘আপা, শুধু একটু কাটব’। পাহাড় কাটা এবং তা বন্ধ করার অভিযান এখন টম অ্যান্ড জেরির খেলার মতো হয়ে গেছে।” তাঁর এ মন্তব্য জনমনে পরিবেশ রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব অনুভব করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের বনাঞ্চল, নদী, জলাশয় এবং পরিবেশের সংরক্ষণকে নগর পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, “আমাদের আসলে সেই অর্থে বনাঞ্চল নেই। পার্বত্য অঞ্চলে কিছু সীমিত বনাঞ্চল রয়েছে, কিন্তু সুন্দরবন এবং অন্যান্য বনাঞ্চলও ট্যুরিজমসহ নানা চাপে দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
তিনি চট্টগ্রামের পাহাড় কাটার বিষয়ে এক উদাহরণও দেন। “চট্টগ্রামে গিয়ে বললাম, শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে আনবেন না, মালিকের নামে মামলা দেবেন। মালিককে গ্রেপ্তার করে আনবেন। এতে কিছুটা পাহাড় কাটা কমেছে, তবে এখনও কোনো মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেলাম না,” বলেন রিজওয়ানা হাসান। তবে, তিনি বলেন, “আমরা কিছু দৃষ্টান্ত রেখে দিতে চাই,” যা ভবিষ্যতে পাহাড় কাটার সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
নগর পরিকল্পনায় উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি, তিনি বিশেষভাবে পরিকল্পনাবিদদের ক্ষমতায়নের উপর জোর দেন। তার মতে, এই ক্ষমতায়ন নগরের জন্য একটি সুসংগঠিত এবং সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। “পরিকল্পনাবিদদের যথাযথ ভূমিকা থাকলে নগরের উন্নয়ন আর পরিবেশের ক্ষতি একসঙ্গে কমানো সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।
এছাড়াও, সম্মেলনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ভারসাম্যহীন জনসংখ্যা বিন্যাসকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি মন্তব্য করেন, “বড় শহরের জনঘনত্ব বিপুল, আর ছোট শহরে তা কম। এই বৈষম্য দূর করতে আঞ্চলিক সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।” তিনি আরো বলেন, প্রতিটি শহরের আকার ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নগর পরিষেবা নির্ধারণ করা উচিত, যাতে সবার জন্য উপযুক্ত সুবিধা নিশ্চিত হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারসের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, “ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা হওয়া উচিত।” তিনি গ্রামীণ এলাকাগুলোকে পরিকল্পনার আওতায় আনার ওপর গুরুত্ব দেন।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদি হাসান সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, যা নগর পরিকল্পনার বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলোর উপর আলোকপাত করেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামও সম্মেলনে বক্তব্য দেন, যেখানে তারা নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনায় সরকারের দায়িত্ব এবং পরিকল্পনাবিদদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
এই সম্মেলনটি আগামী তিন দিন চলবে এবং এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা অংশগ্রহণ করবেন।