পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ভারতীয় অধ্যাপক গ্রেপ্তার

News Desk

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ভারতীয় অধ্যাপক গ্রেপ্তার. Dhakainlight.com

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সংবাদ সম্মেলন সংক্রান্ত মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করার অভিযোগে ভারতের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম আলি খান মাহমুদাবাদ। তিনি হরিয়ানা রাজ্যের সোনিপাতে অবস্থিত আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। পুলিশের বরাতে জানানো হয়েছে, দিল্লি থেকে ৪২ বছর বয়সী মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মাহমুদাবাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট রাষ্ট্রদ্রোহ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, সশস্ত্র বিদ্রোহে উসকানি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো অপরাধের শামিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইন জানিয়েছে, হরিয়ানার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব শাখার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাতেরির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলার সূত্রপাত। এর আগে হরিয়ানা রাজ্য নারী কমিশন মাহমুদাবাদকে তলব করেছিল।

মাহমুদাবাদ যে পোস্টের কারণে বিতর্কের কেন্দ্রে, সেটি তিনি গত ৮ মে ফেসবুকে লিখেছিলেন। তাতে তিনি লিখেছেন, “অনেক ডানপন্থী বিশ্লেষক কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন দেখে আমি খুশি। তবে একইভাবে তাঁরা যদি গণপিটুনির শিকার, নির্বিচারভাবে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং বিজেপির ঘৃণার রাজনীতির শিকার মানুষের জন্যও আওয়াজ তুলতেন, তা হলে ছবিটা আরও ভারসাম্যপূর্ণ হতো।”

তিনি আরও লিখেছিলেন, “নারী সেনা কর্মকর্তাদের সামনে আনা প্রশংসনীয়। তবে সেটি যদি বাস্তবতার প্রতিফলন না হয়, তাহলে তা কেবল প্রতীকী ভণ্ডামি হয়ে দাঁড়ায়।”

পোস্টটিতে তিনি উল্লেখ করেন, মুসলিম সেনা কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশির ব্রিফিং যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভারতীয় মুসলিমদের ওপর সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হামলা এবং বাড়িঘর ধ্বংসের বিষয়েও প্রশ্ন তোলা জরুরি।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর ধারাবাহিক ব্রিফিং পরিচালনা করেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাদের প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।

ভারত ও পাকিস্তান ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও এর আগে কয়েক দিনের মধ্যে সীমান্তজুড়ে গোলাবর্ষণ ও সংঘাতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

হরিয়ানা রাজ্য নারী কমিশন বলেছে, মাহমুদাবাদের বক্তব্যে “নারী সেনা কর্মকর্তাদের অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর ইঙ্গিত রয়েছে”, তাই তাঁকে তলব করা হয় এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে মাহমুদাবাদ তাঁর অবস্থানে অনড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, “আমার বক্তব্য ছিল নাগরিক ও সৈনিকদের জীবন রক্ষার প্রশ্নে। কোনো নারীবিদ্বেষী মনোভাব থেকে আমি কিছু বলিনি। বরং একজন নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ববোধ থেকেই মন্তব্য করেছি।”

মাহমুদাবাদকে কেন্দ্র করে ভারতের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীরা সমর্থন জানিয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের সমালোচনা বা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে ওঠা গণতান্ত্রিক চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বা আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অধ্যাপক মাহমুদাবাদের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন এবং নাগরিক অধিকার ইস্যুতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

Leave a Comment

Footer Section