মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে চলেছে, কারণ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ২০২৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই পদক্ষেপটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাতে পারে এবং পুরো অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা:
২০১৭ সালে, ট্রাম্প তার প্রশাসনের সময় গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এটি ছিল একটি বিতর্কিত প্রস্তাব, যা বিশ্বের অনেক দেশ এবং বিশেষজ্ঞের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজার সীমান্ত এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে পারে, এবং এর ফলে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, এই পরিকল্পনা তখন সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়নি, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিরোধ এবং প্রতিবন্ধকতা ছিল।
নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত:
বর্তমানে, বেনজামিন নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাকে পুনরায় তুলে ধরেছেন এবং গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি দখলে নেওয়ার জন্য তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা শুরু করতে যাচ্ছেন। তার মতে, গাজা উপত্যকা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি, এবং সেখানে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ ও হামাসের উপস্থিতি ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক। তিনি এই দখলের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আশাবাদী, তবে এটি আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়ায় এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলো এবং মুসলিম দেশগুলো, এই সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় নিন্দা করতে পারে। ফিলিস্তিনিরা এটি তাদের স্বাধীনতার জন্য এক বড় হুমকি হিসেবে দেখতে পারে এবং এই পরিকল্পনা তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করবে বলে মনে করে। ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময় সরাসরি সমর্থন দিয়ে এসেছে, এবং নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের পর, বিশ্বব্যাপী আরও ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ হতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও, বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রশাসন এবং বর্তমান পরিস্থিতি, এই পরিকল্পনার প্রতি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আশঙ্কা রয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জে ফেলবে।
ফিলিস্তিনের প্রতি এর প্রভাব:
গাজা দখল ফিলিস্তিনিদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলবে। তারা ইতোমধ্যে এক দীর্ঘ যুদ্ধ এবং সংগ্রামের মধ্যে রয়েছেন, যেখানে তাদের স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার জন্য এক নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। যদি গাজা পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবে তা ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বিপর্যয়ের মতো হতে পারে। গাজার বাসিন্দারা আরও বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘন, শরণার্থী সমস্যা, এবং জাতিগত সংঘর্ষের নতুন সম্ভাবনা।
দূরবর্তী প্রভাব:
এই পদক্ষেপের আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তার ওপর এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব হতে পারে। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্থিরতা এবং সংঘর্ষ এক নতুন স্তরে পৌঁছাতে পারে, যেখানে অন্যান্য দেশও যুক্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, এবং এর ফলে বিশ্ব রাজনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা আরও অনিশ্চিত হতে পারে।
উপসংহার:
নেতানিয়াহুর গাজা দখলের পরিকল্পনা একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ হতে পারে যা মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সম্পর্কের গভীর টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন বাধা তৈরি করবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, তার প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে পারে।