বাংলাদেশে নির্বাচনকে ভারতের এজেন্ডা বলে প্রচার করাকে ‘বিপজ্জনক’ ও ‘ভুল রাজনৈতিক কৌশল’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তাঁর মতে, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এসব বাংলাদেশের জনগণের প্রয়োজনেই হওয়া উচিত, অন্য কোনো দেশের স্বার্থে নয়।
রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ‘অবিলম্বে বিচার–সংস্কার–নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করো’ শীর্ষক আলোচনা হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “ভারতের কোনো মিডিয়া বা রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি বাংলাদেশে নির্বাচন চায়, তবুও সেটিকে ভারতের এজেন্ডা বলা রাজনৈতিকভাবে ভুল এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য দুর্বল হয় এবং ফ্যাসিস্টদেরই লাভ হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করেছিল, তা রুখতে বাংলাদেশে জনগণের ভেতর একটি ঐক্য তৈরি হয়েছিল। এখন নির্বাচনকে ভারতীয় এজেন্ডা বলে প্রচার করে সেই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা চলছে।”
সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “যারা অতীতে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে সহায়তা করেছেন, তারা এখন নতুন ছকে আবার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছেন।” তিনি বলেন, “তরুণদের ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে, যা বিপজ্জনক এবং লজ্জাজনক।”
এবি পার্টির সভাপতি মজিবর রহমান মঞ্জু প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা আশা করা হয়েছিল, যা তিনি দিতে পারেননি।”
তিনি আরও বলেন, “মূল প্রশ্নগুলো বাদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ঘিরে অপ্রয়োজনীয় গুজব ছড়ানো হচ্ছে, একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকেও অসম্মান করা হচ্ছে।”
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “সব রাজনৈতিক দলই ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন চায়। অথচ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, একটি দল ছাড়া কেউ নির্বাচন চায় না—এটি সঠিক তথ্য নয়। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টাকে সঠিক তথ্য দেওয়া।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।