দেশে তৈরি মিতসুবিশি গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু, চার মডেলের এক্সপ্যান্ডার গাড়ির দাম ৩৫ থেকে ৩৮ লাখ টাকা

News Desk

দেশে তৈরি মিতসুবিশি গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু, চার মডেলের এক্সপ্যান্ডার গাড়ির দাম ৩৫ থেকে ৩৮ লাখ টাকা. Dhakainlight.com

বাংলাদেশে তৈরি জাপানি ব্র্যান্ড মিতসুবিশির ‘এক্সপ্যান্ডার’ মডেলের গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু করেছে র‌্যানকন মোটরস। রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শনিবার সন্ধ্যায় এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গাড়িগুলোর উদ্বোধন করা হয়।

দেশে প্রথমবারের মতো উৎপাদিত এই সিরিজের চারটি ভিন্ন সংস্করণের গাড়ি—স্পোর্টস, প্রিমিয়াম, ক্ল্যাসিক ও ইকো—বাজারে এসেছে। এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩৮, ৩৬, ৩৫ ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ইকো সংস্করণটি এলপিজি গ্যাসচালিত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এত দিন র‌্যানকনের কারখানায় বিদেশ থেকে আনা যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হলেও এখন সম্পূর্ণ গাড়ি প্রস্তুতের বিভিন্ন ধাপ—কাঠামো নির্মাণ, রঙ করানো, যন্ত্রাংশ সংযোজন এবং গুণগত নিরীক্ষা—দেশেই সম্পন্ন হচ্ছে। এই উন্নয়নের জন্য কারখানাটিকে আধুনিকায়ন করতে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুরে অবস্থিত র‌্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এই গাড়িগুলো তৈরি হচ্ছে।

৫২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই পার্কে মিতসুবিশির পাশাপাশি মার্সিডিজ বেঞ্জ বাসের চেসিস, সুজুকি মোটরসাইকেল, প্রোটন, জ্যাক গাড়ি, এবং এলজি ও তোশিবার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি। আরও উপস্থিত ছিলেন র‌্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী, পরিচালক ফারহানা করিম এবং মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক ইউতাকা ইয়ানো। ভিডিও বার্তায় অংশ নেন মিতসুবিশির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকাও কাতো।

তাকাও কাতো বলেন, বাংলাদেশে এই গাড়ির উৎপাদন তাদের জন্য একটি ‘সুন্দর পথচলার সূচনা’। তিনি জানান, ‘এক্সপ্যান্ডার’ মূলত আসিয়ান বাজারের জন্য তৈরি একটি পারিবারিক গাড়ি। বাংলাদেশের বাজারে এর চাহিদা যথেষ্ট রয়েছে। ভবিষ্যতে র‌্যানকনের সঙ্গে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও মানসম্পন্ন গাড়ি তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

মিতসুবিশির বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক ইউতাকা ইয়ানো বলেন, বাংলাদেশে নির্মিত গাড়িতে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে গর্বের সঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশ এখন মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম।

র‌্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, র‌্যানকন শুধু ইলেকট্রনিকস ও মোটরবাইক নয়, অটোমোবাইল খাতেও উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি দেশেই উৎপাদন করে গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তিনি আরও জানান, নতুন বিনিয়োগের ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে গাড়ির দাম প্রায় ১১ লাখ টাকা কম রাখা সম্ভব হয়েছে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বলেন, এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, যখন বাংলাদেশ সরকার অটোমোবাইল খাতে বিনিয়োগ আহ্বান করেছিল। সরকারের সহায়তায় শুল্কছাড় এবং নীতিগত সুবিধা পেয়ে র‌্যানকন ও মিতসুবিশি দেশে গাড়ি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। তার মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণে শিল্প খাতে বৈচিত্র্য আনয়ন জরুরি এবং এই প্রকল্প সেই লক্ষ্য পূরণে বড় পদক্ষেপ।

গাড়িটির কারিগরি দিকেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ১,৫০০ সিসির শক্তিশালী ইঞ্জিনে নির্মিত এই ‘এক্সপ্যান্ডার’ গাড়ি ৭ জন যাত্রী নিয়ে অনায়াসে উঁচু পাহাড়ি পথে উঠতে সক্ষম। গাড়িটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার এবং এর ওজন প্রায় ১,২৬০ কেজি।

‘এক্সপ্যান্ডার’ বাজারে পাওয়া যাবে সাতটি আকর্ষণীয় রঙে—ডিপ ব্রোঞ্জ মেটালিক, গ্রাফাইট গ্রে মেটালিক, কোয়ার্টজ হোয়াইট পার্ল, রেড মেটালিক, ব্লেড সিলভার মেটালিক, গ্রিন ব্রোঞ্জ মেটালিক এবং জেট ব্ল্যাক মাইকা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও মিতসুবিশি মোটরসের পণ্যদূত সিয়াম আহমেদ। অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল আলো, রঙ ও প্রযুক্তির দ্যুতি, যা দেশের অটোমোবাইল শিল্পে নতুন যুগের সূচনার বার্তা দেয়।

Footer Section