সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে হত্যার কোনো সম্ভাব্য পরিকল্পনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন সিনেট সদস্য জিন শাহিন। তিনি জানান, এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শারার মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠকের ঠিক আগেই।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সিনেটের এক শুনানিতে এই তথ্য তুলে ধরেন শাহিন। তিনি বলেন, “সিরিয়ার নতুন নেতাকে হত্যার মতো একটি বিকল্প পরিকল্পনার কথা শুনেছি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বাদশাহ আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট করে বলেন—শারাকে হত্যার চেষ্টা সিরিয়ায় আবার পূর্ণমাত্রার গৃহযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। যা এই মুহূর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
বিষয়টি গুরুত্ব পায় আরও বেশি, কারণ এটি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যখন ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। রিয়াদে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, “তিনি একজন তরুণ, শক্তিশালী মানুষ, যার অতীতও বলিষ্ঠ। তিনি একজন যোদ্ধা।” এই মন্তব্যের পরই মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্বে আলোচনার ঝড় উঠে।
এই ঘটনাপ্রবাহের মাঝেই উঠে আসে ‘শারাকে হত্যা পরিকল্পনার গুজব’। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা স্বীকার করা হয়নি।
তবে বিষয়টি সামনে আসে ট্রাম্প প্রশাসনের নিকটপ্রাচ্যবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি পদের মনোনয়নপ্রাপ্ত জোয়েল রেইবার্নকে ঘিরে শুনানির সময়। রেইবার্নকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা জানি না। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যও এমন কোনো উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্প যখন রিয়াদে দেন, তখন সেখানে উপস্থিত বিদেশি নেতারা করতালিতে ফেটে পড়েন। কিন্তু হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তা এতে বিস্মিত হন। এমনকি পররাষ্ট্র দপ্তরের যেসব কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পক্ষে ছিলেন, তাঁরাও জানিয়েছেন—এই ঘোষণা ছিল হঠাৎ এবং তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—রিয়াদে ট্রাম্পের ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন আগেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সিরিয়াবিষয়ক উপদেষ্টারা সমপর্যায়ের বিদেশি কূটনীতিকদের বলেছিলেন, দামেস্কের নতুন সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ফলে এই আকস্মিক নীতিবদল প্রশাসনের অভ্যন্তরেও বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (NSC) কিছু সদস্যও আগে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না দিয়ে তা ব্যবহার করে শারার কাছ থেকে কৌশলগত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা হবে। ফলে ট্রাম্পের ঘোষণা এবং এর পরবর্তী কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলো এখন গভীর আলোচনার কেন্দ্রে।
বর্তমানে সিরিয়ার রাজনীতিতে শারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অনিশ্চিত সময়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমন সময় তাকে হত্যা করার কোনো আলোচনা শুধু একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে—জর্ডানের বাদশাহর হুঁশিয়ারির মূল বার্তা ছিল এটাই।
এই পরিস্থিতির দিকে এখন নজর রাখছে বিশ্ব কূটনৈতিক মহল। কারণ শারার নেতৃত্বে সিরিয়া যদি স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে এই অঞ্চল দীর্ঘদিন পর কিছুটা প্রশান্তি পেতে পারে। আর যদি ষড়যন্ত্র বা হস্তক্ষেপ চলে, তবে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।