কানাডায় যাওয়ার আগে ভাইরাল মাসুদ নাটকে অভিনয় করেন সিফাত তাহসিন। পাঁচ বছর আগের নাটকটি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এরপর সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। এই সময়টায় পরিবার নিয়ে ছিল তাঁর যত ব্যস্ততা। সম্প্রতি তিনি খবরে এসেছেন ফাঁদের প্রেমে নাটকের শুটিংয়ের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মাইনাস ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে শুটিং করেছেন। এ নাটকে তাঁর সহশিল্পী সাঈদ বাবু। পরিচালনায় ছিলেন তানভীর তারেক। তাহসিন প্রথম আলোকে বললেন, ‘প্রবাসে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ নিয়ে প্রেমের যে ফাঁদ পাতা হয়, এটি তেমনই একটি গল্প। পরিচালক জানিয়েছেন, সত্যিকারের গল্পে নাটকটি তৈরি হয়েছে। এ রকম ঘটনা কিন্তু দেশের বাইরে অহরহ ঘটে। আমি নিজে শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় গিয়েছি, এমন ঘটনা অনেক শুনেছি।’

কানাডায় তাহসিন যে এলাকায় থাকেন, সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৩৫ ডিগ্রিও হয়। তবে তখন সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া থাকে। কিন্তু সেই তাহসিন নিউইয়র্কে মাইনাস ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শুটিং করে কাবু হয়ে যান। সেই গল্পও বললেন, ‘প্রচুর ঠান্ডার মধ্যে শুটিং করেছি। মাইনাস ৮ ডিগ্রি হলেও অনুভূত হয়েছে ১৫ ডিগ্রি। শিফন শাড়ি পরে শট দিচ্ছিলাম। নিউইয়র্কের এই ঠান্ডা সহ্য করার মতো ছিল না। ঘণ্টা দেড়েকের মতো বাইরে ছিলাম। শট শেষ করে দৌড়ে গাড়িতে ঢুকে পড়তাম। আমাদের পরিচালক তানভীর ভাই তো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।’
নতুন কাজ
দেশের বাইরে থাকলেও সময়-সুযোগ বের করে দেশে বানানো অনেক কাজ দেখেন। কানাডায় বাংলাদেশের সিনেমাও মুক্তি পায়। পরিবার নিয়ে ছবিও দেখেন। ইদানীং যেসব পরিচালক কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে প্রিয় তালিকায় আছেন। এর মধ্যে নুহাশ হুমায়ূন, ভিকি জাহেদ, মিজানুর রহমান আরিয়ান, আশফাক নিপুন উল্লেখযোগ্য। এদিকে তাহসিনের দেশে ফেরার খবরটি কয়েকজন পরিচালক আগেই জানতে পেরেছেন। তাঁদের কেউ একসময়ের এই লাক্স তারকার সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। কানাডা যাওয়ার আগে কোনো পরিচালকের নতুন কোনো কাজে দেখাও যেতে পারে। তাহসিন জানালেন, তিনিও কাজ করতে আগ্রহী। দেখা যাক, ব্যাটে-বলে মিললে করে ফেলবেন। তাহসিন বললেন, ‘কদিন আগে বেগমপাড়া নামে একটি ওয়েব ফিল্ম কানাডায় শুটিং হয়েছে। এর দ্বিতীয় কিস্তি বানাবেন পরিচালক, যেটিতে মোশাররফ করিম ভাই অভিনয় করবেন। পরিচালক কামাল হোসেন আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। কানাডায় যাওয়ার পর এটির শুটিংও করতে পারি।’

অনুষ্ঠানের কথা শুনলেই
দেশের বাইরে থাকলেও অভিনয়ের ব্যস্ত সময়ের কথা তাহসিনের মনে পড়ে। কমিউনিটির কোনো অনুষ্ঠান হলে, একবারও কেউ যদি বলেন, ছুটে যান। তাহসিনের মতে, ২০০৯ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে অভিনয়ে ব্যস্ত হন। টানা কাজ করেছেন। এই যাত্রায় হুমায়ূন আহমেদের মতো পরিচালকের সঙ্গেও একটানা চারটি নাটকে কাজ করেছেন। তাহসিন বললেন, ‘জীবনের প্রয়োজনে নানা ব্যস্ততা থাকলেও কোনো অনুষ্ঠানের কথা শুনলে মন ছুটে যায়। অভিনয় করতেও মন চায়। কমিউনিটির কোনো অনুষ্ঠান হলে তো আমি উপস্থাপনা করি। বেশ উপভোগ করি।’

প্রবাসজীবন
২০১৮ সালে বিয়ে করেন তাহসিন। তাঁর সংসারে চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান আছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন তাঁর জীবন। কানাডায় শ্বশুরপক্ষের অনেক আত্মীয় আছেন বলে জানালেন তিনি। প্রবাসজীবনের প্রসঙ্গ উঠতেই তাহসিন বললেন, ‘আমার সকাল শুরু হয় সাড়ে পাঁচটায়। এরপর বাচ্চাকে তৈরি করা। খাবার তৈরি করা। ডে-কেয়ারে ড্রপ করা। আমার কাজে যাওয়া। এরপর মেয়েকে নিয়ে আসা। রাত সাড়ে আটটার মধ্যে যেকোনো মূল্যে মেয়েকে ঘুম পাড়াতে হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চরকির মতো ঘুরতে থাকি। এরপর আর এনার্জি পাই না। যেদিন একটু ফ্রি হই, জিমে যাওয়ার ট্রাই করি। নইলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আড্ডা। এভাবেই কাটে। তা ছাড়া বিদেশের জীবন হচ্ছে উইন্টারে দাওয়াত আর দাওয়াত এবং গল্পগুজব করা। সামারে ঘুরতে যাওয়া। যেহেতু কানাডায় ছয় মাস ঠান্ডা, বাসায় থাকতে হয়। ইনডোর অনেক কর্মকাণ্ড থাকে, সময়ও দ্রুত কেটে যায়।’

পারলারের কথা বলে
২০০৯ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সেরা পাঁচে ছিলেন তাহসিন। তবে পরিবারের কেউ বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেননি। ওই সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়তেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে থাকা অবস্থায় দুই বন্ধু মিলে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নাম নিবন্ধন করেন। সেই গল্প মনে করে তাহসিন বললেন, ‘হুজুগে লাক্সে নাম লেখাই। আম্মাকে সেদিন বলেছিলাম, পারলারে যাচ্ছি চুল কাটাতে। এরপর তো বনানীতে অডিশনে চলে যাই। আমার বন্ধু বাদ পড়ে। আমি টিকে যাই। বন্ধু আমাকে ছেড়ে যায় না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে রাত। বাসায় যাওয়ার পর সেকি বকাঝকা খেয়েছি! তারপর একটা সময় ক্যাম্পে যাওয়ার ডাক পড়ে। আম্মু কিছুটা সায় দিলেও আব্বু না মানেই না। খেপে যান। এদিকে আমিও ভাবলাম, হয়তো বাদ পড়ে যাব, দেখি না এক সপ্তাহ। এভাবে ফাইনালে সেরা পাঁচে জায়গা করা। অভিনয়েও নিয়মিত হওয়া। তবে আমি মনে করি, লাক্সের সেই জার্নি আমার সারা জীবনের ভিত গড়ে দিয়েছিল। আমার যে গ্রুমিং হয়েছিল, এটা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, পথ চলতে কাজে দিয়েছে।’