চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের জন্য প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি উঠেছে

News Desk

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের জন্য প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি উঠেছে. Dhakainlight.com

চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে। শতবর্ষী এই বাণিজ্য সংগঠনের প্রশাসকের বর্তমান মেয়াদ আগামী ৭ জুলাই শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখনো নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসকের মেয়াদ আরও অন্তত দুই মাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের পর ৯ সেপ্টেম্বর তিনি এ দায়িত্ব পান। প্রথমে ১২০ দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও পরে তাঁর মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো হয়, যা চলতি বছরের জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে। তবে দুই দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পরও চেম্বারের নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

চেম্বারের নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড এবং আপিল বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়। যদিও নির্বাচন বোর্ড এক মাস আগে গঠিত হয়েছে, এখনো তফসিলের কোনো ঘোষণা আসেনি।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হলে প্রথমেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে এবং কিছু বিতর্কিত ভোটার শ্রেণি বাদ দিতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দুটি শ্রেণি হলো টাউন অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্রেড গ্রুপ, যেগুলোর মাধ্যমে একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন চেম্বার নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এই শ্রেণিগুলো মূলত পকেট ভোট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে এসব শ্রেণি বিলুপ্ত না করে নির্বাচন দিলে তা বিতর্কিত হতে পারে।

এই দুটি শ্রেণি বাতিলের দাবিতে ‘চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ’ নামে একটি সংগঠন চেম্বার প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে। প্রশাসক তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে পাঠালেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সংগঠনের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক বলেন, “ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পকেট ভোট বাদ না দিয়ে নির্বাচন হলে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো জরুরি।”

এদিকে চেম্বারের বর্তমান প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা জানান, জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, প্রশাসকের মেয়াদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাধা নয়, কারণ এখন দায়িত্বে আছেন নির্বাচন বোর্ডের প্রধান। বর্তমানে এ দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম। তবে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

চেম্বারে শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এ সময়ে আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর পছন্দের লোকজনকেই ভোটার বানিয়ে চেম্বারের নেতৃত্বে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দীর্ঘ অনিয়মের অবসান ঘটাতে ব্যবসায়ীরা এখন নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন।

প্রমাণ পাওয়া গেছে, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চেম্বারে নতুন সদস্য হয়েছেন ৫ হাজার ৭৮৭ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকে দশ বছর পর সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশায় সদস্যপদ গ্রহণ করেছেন। যদিও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ না হওয়ায় এবং ভোটার হওয়ার সময়সীমার বাধ্যবাধকতায় তাঁদের অনেকেই ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

চেম্বারের সহকারী সচিব (সদস্যপদ শাখা) সৈয়দ সালাওয়াত উল্লাহ জানান, নির্বাচনের তারিখ থেকে ১২০ দিন আগে যাঁরা সদস্য হয়েছেন, তাঁরা ভোটার হতে পারবেন। ফলে আগস্টে নির্বাচন হলে এ সময়সীমা অনুযায়ী অনেকে ভোট দিতে পারবেন না।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচন আয়োজনের জন্য এখনো বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ। বিশেষ করে বিতর্কিত ভোটার শ্রেণি বিলুপ্ত না করা এবং তালিকা হালনাগাদ না করা হলে নির্বাচন নিয়ে আবারো প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মত, একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসকের মেয়াদ কমপক্ষে আরও দুই মাস বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। এখন দেখার বিষয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই দাবি কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে এবং ব্যবসায়ী সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী কী পদক্ষেপ নেয়।

4o

Leave a Comment

Footer Section