গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে খাদ্যসংকটে কঙ্কালসার শিশু সিওয়ার, প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই

News Desk

গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে খাদ্যসংকটে কঙ্কালসার শিশু সিওয়ার, প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই. Dhakainlight.com

ইসরায়েলি অবরোধে ধুঁকতে থাকা গাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় নতুন মাত্রা পেয়েছে। পাঁচ মাস বয়সী শিশু সিওয়ার আশুর এখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। ওজন মাত্র দুই কেজির সামান্য বেশি। জন্ম থেকেই অপুষ্টিতে ভোগা এই শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলা দুধও মিলছে না। তার মা নাজওয়া ও নানি রিম নিজেরাও ক্ষুধায় জর্জরিত, প্রতিদিন খাবার জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসার পর এক কৌটা ফর্মুলা দুধ হাতে পেয়েই শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই দুধ ফুরিয়ে গেছে বহু আগেই। বাসায় ফেরার পর সিওয়ারের ওজন আরও কমেছে। মায়ের ভাষায়, এখনো সে হাড় জিরজিরে, অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। তার ওপর শিশু সিওয়ারের প্রচণ্ড অ্যালার্জি—সাধারণ দুধ হজম করতে পারে না সে।

গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ খাদ্যের আশায় ভিড় করে। কেউ খাবার পায়, কেউ কিছুই পায় না। এই পরিস্থিতিতে বিবিসির এক সাংবাদিক নিজেই শিশুটির খোঁজে গেছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গড়ে ওঠা এক কুঁড়ে ঘরে। যেখানে সিওয়ার তার মা ও নানির সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে একটি গদি, একটি আয়না আর কিছু ব্যবহৃত আসবাবের পাশে।

সিওয়ারের দেহে মাছি ভনভন করছে, বাতাসে ধুলোমাখা কাপড় দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা হয়, যাতে পোকার কামড় থেকে রক্ষা পায়। শিশু সিওয়ার যুদ্ধের আওয়াজ চিনে গেছে। কখনো ট্যাংকের গর্জন, কখনো ড্রোনের শব্দ, কখনো রকেট—সবই তার চেনা। শব্দ পেলে ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে, ঘুম ভেঙে যায়, মায়ের বুক জড়িয়ে ধরে।

শুধু শিশু নয়, গাজায় বহু নারীও অপুষ্টিতে ভুগছেন। অনেক মায়ের দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টি না থাকায় তারা সন্তানদের বুকের দুধও পান করাতে পারছেন না। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব চরমে পৌঁছেছে। জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

এদিকে ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কোগাট দাবি করেছে, গাজায় খাদ্যসংকট নেই এবং সম্প্রতি যথেষ্ট পরিমাণে শিশুখাদ্য ও ময়দা সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মন্তব্য করেছেন, ইসরায়েল যা দিচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় ‘এক চা–চামচের’ সমান।

বর্তমানে গাজার সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে শিশুদের জীবনযাপন যেন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। ইসরায়েলি হামলা, খাবারের সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব, ওষুধের ঘাটতি সব মিলিয়ে গাজা এখন এক বিপর্যস্ত মৃত্যুপুরী। এমন বাস্তবতায় শিশু সিওয়ারের কান্না শুধু একটি পরিবারের কান্না নয়, এটি পুরো গাজার অসহায় মানুষের আহাজারির প্রতীক।

এই অবস্থার অবসানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Comment

Footer Section