‘কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা, আমাদের সমাজের ভদ্রলোকেরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে’ — প্রধান উপদেষ্টা

News Desk

‘কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা, আমাদের সমাজের ভদ্রলোকেরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে’ — প্রধান উপদেষ্টা. Dhakainlight.com

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! আমাদের সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’, আমাদের আত্মীয়–পরিজনেরাই এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।”

আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন কমিশনপ্রধান সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় কমিশনের সদস্য নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন ও নাবিলা ইদ্রিস ছাড়াও উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। তাই এই প্রতিবেদন বই আকারে ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, “আপনারা যা যা কিছু পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত। গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা—তিন বাই তিন ফুটের বন্দিশালায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মানুষ আটকে থেকেছে—এই নির্মমতা মানুষকে জানতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা কমিশন সদস্যদের নির্দেশনা দেন যেন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করণীয়গুলো চিহ্নিত করে প্রতিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করা হয়। যাতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে।

কমিশনপ্রধান জানান, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই–বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। কমিশন আশঙ্কা করছে, মোট অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে এখনো তিন শতাধিক গুমের শিকার ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ জানানো হয়—যাতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার অন্তত ব্যাংক লেনদেন বা মৌলিক নাগরিক সেবা পেতে পারে। কমিশনপ্রধান বলেন, বর্তমান আইনে সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাঁকে মৃত ধরে নেওয়ার সুযোগ আছে, এটি যেন পাঁচ বছরে আনা হয়, সে বিষয়ে আইনি সুপারিশ বিবেচনার দাবি জানান তিনি।

কমিশনের এক সদস্য বলেন, “ঘটনাগুলো এত ভয়াবহ যে অনেক জড়িত কর্মকর্তা ও ব্যক্তি অনুশোচনায় ভুগছেন এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এমনকি দুজন অফিসার লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন, যা গণভবনে জমা রয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধানও এই চিঠির বিষয়ে প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।”

প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা ভয়ভীতি ও হুমকি উপেক্ষা করে যে কাজ করে যাচ্ছেন, তা এ দেশের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করবে, তারাও আপনাদের দেখে পথ পাবে।”

এই প্রতিবেদনকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ও বেদনার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে এই কমিশনের কাজ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Footer Section