কক্সবাজারে বড় গরুর বিক্রি কম, বাড়ছে খামারিদের দুশ্চিন্তা

News Desk

কক্সবাজারের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে জমে উঠেছে বেচাকেনা। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকলেও বড় গরুর বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম, যা খামারিদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জেলার ৯৪টি পশুর হাটে প্রতিদিন লাখো গরু-মহিষ ওঠানো হলেও ১০ থেকে ২৮ মণ ওজনের বড় ষাঁড়গুলো ক্রেতা না পাওয়ায় অনেক খামারি আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন।

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকার অস্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বড় গরুগুলোকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও বিক্রি সীমিত। ‘মায়ের দোয়া খামার’-এর মালিক নুরুল ইসলামের ২৮ মণ ওজনের ষাঁড় ‘কালা বাহাদুর’-এর দাম উঠেছে মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, যা তাঁর প্রত্যাশার তুলনায় কম।

‘কে আর এগ্রো ফার্ম’-এর খলিলুর রহমান বলেন, হাটে বড় গরুর চেয়ে ৩ থেকে ৮ মণ ওজনের গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনি তাঁর আনা ২৮টি গরুর মধ্যে মাত্র দুটি বিক্রি করতে পেরেছেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হাঁড়িরমাথা হাটসহ জেলার উখিয়া, টেকনাফ, রামু, ঈদগাঁওসহ অন্তত ১৫টি হাটে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইজারাদারদের মতে, আজ বুধবার থেকে বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে, তবে বড় গরুর বাজার স্থবির রয়ে গেছে।

ক্রেতারা বড় গরুর দামের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। শহরের এক ক্রেতা বলেন, ৮ মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫ লাখ টাকা, যার ফলে প্রতি কেজি মাংসের দাম দাঁড়ায় ১ হাজার টাকার বেশি, যেখানে বাজারে মাংস ৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, কক্সবাজার জেলায় এবারের কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৭টি। সরবরাহ রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে ১০ মণের বেশি ওজনের গরু রয়েছে ৫৯ হাজার ২৯১টি। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, পশুর সংকট নেই, তবে খামারিদের দাবি, আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গার জন্যও কমপক্ষে ৫-৬ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে, যা হিসাবের বাইরে।

বড় গরুর বিক্রি কম হওয়ার পেছনে চোরাই পশুর দৌরাত্ম্যকেই দায়ী করছেন স্থানীয় খামারিরা। খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, সীমান্তপথে মিয়ানমার থেকে আসা গরুগুলো স্থানীয় বাজারে ঢুকে পড়ছে কম দামে, ফলে দেশি গরুর বিক্রি ব্যাহত হচ্ছে।

টেকনাফের ‘নুর এগ্রো খামার’-এর মালিক আবদুল করিম জানান, তিনি তাঁর ১৫ মণ ওজনের দুটি গরুর জন্য ১৬ লাখ টাকা চেয়েছেন, কিন্তু সর্বোচ্চ ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রস্তাব পেয়েছেন।

পূর্বে চালু থাকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতি মাসে আমদানি হতো ৪০ হাজার গরু-মহিষ। ২০২১ সালে চোরাচালান রোধে এই করিডর বন্ধ করা হয়। তবু খামারিরা অভিযোগ করছেন, এখনো সীমান্ত দিয়ে গোপনে পশু আসছে, যার বিরুদ্ধে কার্যকর নজরদারি প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, হাটে জালনোট, চাঁদাবাজি ও অসুস্থ পশু বিক্রি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। তবে চোরাচালান ও বড় গরুর বাজার মন্দার বিষয়ে কোনো সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা এখনো জানানো হয়নি।

কক্সবাজারের খামারিরা এখন আশায় আছেন, ঈদের আগের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে এবং তাঁরা অন্তত ন্যায্যমূল্য পাবেন। তা না হলে জেলার হাজারো খামারি পড়বেন বড় ধরনের আর্থিক সংকটে।

Footer Section