কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। ১৯ মে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় সফলভাবে পৌঁছান।
শাকিলের অভিযান সমন্বয়কারীরা তাঁর ফেসবুক পেজে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে স্ট্যাটাস দেন, “এইমাত্র খবর পেলাম শাকিল সামিট করেছে এবং সুস্থ আছে। বর্তমানে ক্যাম্প ৪-এ নেমে এসেছে। নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে বিস্তারিত তথ্য এখন দেওয়া যাচ্ছে না।”
ইকরামুল হাসানের ‘সি টু সামিট’ অভিযানের লক্ষ্য ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হেঁটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ স্পর্শ করা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে হাঁটা শুরু করেন। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ১২ দিন সময় নেন। এরপর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড়ে পৌঁছান। পরে তিনি ভারত পাড়ি দিয়ে নেপালে প্রবেশ করেন। দীর্ঘ ১,৪০০ কিলোমিটার হাঁটার পর ২৯ এপ্রিল এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছান।
এরপর ক্যাম্প ২, ক্যাম্প ৩ এবং ক্যাম্প ৪ অতিক্রম করে ১৯ মে তিনি এভারেস্টের শৃঙ্গে আরোহণ সম্পন্ন করেন।
১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ পর্যন্ত হাঁটার অভিযান সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ নামে এই অভিযান পরিচালনা করেন, যা ইকরামুল হাসানের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। তিনি তার অভিযানের নামও দিয়েছেন ‘সি টু সামিট’।
এই অভিযান প্রধানত ‘প্রাণ’ এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া সহযোগী হিসেবে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল এবং সিস্টেমা টুথব্রাশ।
বাংলাদেশে প্রথম এভারেস্ট অভিযান ১৯৫৩ সালে পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে মুসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শৃঙ্গ স্পর্শ করেন। এরপর মুমিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরীনসহ কয়েকজন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০২৪ সালে বাবর আলী আবার এভারেস্ট জয় করেন। এবার সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন ইকরামুল হাসান।
ইকরামুল হাসান ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘কেয়াজো-রি’, ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’, ‘হিমলুং’ ও ‘ডোলমা খাং’ শৃঙ্গ সফলভাবে আরোহণ করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি ‘গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল’ নামে পরিচিত হিমালয়ের ১,৭০০ কিলোমিটার দুর্গম পথ হেঁটে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
ইকরামুল হাসানের এ সফল অভিযান বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করল।