ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা, ঘৃণা-সন্ত্রাসে নিন্দার ঝড়

News Desk

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা, ঘৃণা-সন্ত্রাসে নিন্দার ঝড়. Dhakainlight.com

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের পাশে বুধবার রাতে এক মর্মান্তিক বন্দুক হামলায় ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। রাত ৯টা ৮ মিনিটে থার্ড স্ট্রিট ও এফ স্ট্রিটের সংযোগস্থলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ঘটনার সময় ওই দুই কর্মকর্তা একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে বের হচ্ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, একজন পুরুষ ও একজন নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহতদের বাঁচাতে সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন জরুরি সেবাকর্মীরা।

পুলিশ জানায়, হামলার আগে সন্দেহভাজন এলিয়াস রদ্রিগেজ (৩০), যিনি শিকাগো, ইলিনয় থেকে এসেছেন, মিউজিয়ামের সামনে ঘোরাফেরা করছিলেন। একপর্যায়ে চারজনের একটি দলের দিকে এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডগান থেকে গুলি চালান। নিহত দুইজন একটি প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন এবং বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার। তিনি জানান, নিহত পুরুষটি সদ্য বিয়ের আংটি কিনেছিলেন এবং জেরুজালেমে প্রেমিকাকে প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর হামলাকারী নিজেই মিউজিয়ামে প্রবেশ করে। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে হেফাজতে নেন। আটক হওয়ার পর সে জানায়, অস্ত্রটি কোথায় ফেলে এসেছে। পুলিশ পরে সেই অস্ত্র উদ্ধার করে। আটক অবস্থায় রদ্রিগেজ “ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দিচ্ছিলেন।

পুলিশ প্রধান পামেলা স্মিথ বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত নয় বলে আমাদের বিশ্বাস। সন্দেহভাজন আগে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিল না।”

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে বলেন, “এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড, যা স্পষ্টতই ইহুদিবিদ্বেষমূলক, এখনই বন্ধ করতে হবে। ঘৃণা ও চরমপন্থার কোনো স্থান নেই এই দেশে। নিহতদের পরিবারদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন এবং বলেন, “রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে, তাঁর প্রার্থনা ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে রয়েছে। স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল সব সংস্থার সঙ্গে কাজ করে আমরা এই ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব।”

ইসরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, নিহত দুই কর্মীকে “নিকটবর্তী দূরত্ব থেকে” গুলি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, তারা স্থানীয় ও ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রাখছেন।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, “এই নৃশংস হামলার তদন্ত চলছে। দয়া করে নিহতদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করুন। অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”

ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেন, “বর্তমানে শহরে আর কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি বার্তা দিতে চাই— ইহুদিবিদ্বেষ এবং ঘৃণার বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে দাঁড়াব।”

এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। এক্স (সাবেক টুইটার)–এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, “ওয়াশিংটনে একটি ইহুদি অনুষ্ঠানের বাইরে এই হত্যাকাণ্ড একটি বর্বর ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা।”

আমেরিকান জিউইশ কমিটির সিইও টেড ডয়েচ বলেন, “ঘটনার রাতে ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামে আমরা একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলাম। এর বাইরে এমন এক ভয়ংকর হামলা আমাদের মর্মাহত করেছে।”

এই হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করেছে— যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ইহুদিবিদ্বেষ, রাজনৈতিক চরমপন্থা ও ঘৃণাজনিত সহিংসতা আজ কতটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীর কঠিন বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Leave a Comment

Footer Section