এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনীর ছদ্মবেশে ৭০ ভরি সোনা লুট: পুলিশের চার সদস্য জড়িত

News Desk

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনীর ছদ্মবেশে ৭০ ভরি সোনা লুট: পুলিশের চার সদস্য জড়িত. Dhakainlight.com

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ ভরি সোনা লুটের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের চার সদস্যকে চিহ্নিত করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের চালককেও আটক করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম তাঁর খালা ও খালাতো বোনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে তিনি একটি উবার প্রাইভেট কারে করে পুরান ঢাকার বংশালের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মগবাজারের দিকে যাওয়ার সময় টোল পার হওয়ার পরপরই একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাঁদের গতি রোধ করে।

গাড়ি থেকে চারজন ব্যক্তি নেমে নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে সাইফুলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে, তিনজনকেই মাইক্রোবাসে তোলে তারা। গাড়ির জানালাগুলো ছিল কালো কাচে ঢাকা, যাতে ভেতরের কিছু দেখা না যায়। এরপর তাদের মারধর করে, ভয় দেখিয়ে সব সোনা লুটে নেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ও গুলি করে হত্যার ভয়ও দেখানো হয়।

পরে ভুক্তভোগীদের রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। ভয়ে সাইফুল ইসলাম তখনই মামলা করতে সাহস পাননি। পরে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মামলাটি দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পরদিনই গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসচালক আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে। এরপর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উঠে আসে আরও এক পুলিশ সদস্য, কুমিল্লা জেলা ডিবির এসআই রিপন সরকারের নাম। তাঁর নেতৃত্বেই পুরো অপারেশন পরিচালিত হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। পরে গ্রেপ্তার করা হয় আবু বকর নামে আরেক পুলিশ সদস্যকেও।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ইরফান খান জানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়। এই ঘটনায় কনস্টেবল হানিফ নামের আরেক পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততার খবর সামনে আসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিরাপদ ও প্রযুক্তিনির্ভর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এমন লুটের ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে মামলা করতে সাহস পাইনি। ভয় হচ্ছিল, যদি উল্টো আমাকে ফাঁসানো হয়। পরে সাহস করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।”

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছে, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Footer Section