অধ্যাপক ইউনূসের মুখ থেকেই জাতি জানতে চায়—সরকার কী চায়, কোথায় যাচ্ছে দেশ

News Desk

অধ্যাপক ইউনূসের মুখ থেকেই জাতি জানতে চায়—সরকার কী চায়, কোথায় যাচ্ছে দেশ. Dhakainlight.com

দেশ এখন এক বিশেষ রাজনৈতিক মুহূর্ত পার করছে। একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য জাতীয় সংলাপ, সংস্কার, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মাঝেই জাপান সফর সম্পন্ন করে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জাপান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও কৌশলগত চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ, কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি, এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার নানা পদক্ষেপ। এতসব গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের পরও জাতি অপেক্ষা করছে—এই সফর ও সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য।

অধ্যাপক ইউনূস সাধারণত নীরব থেকে কাজ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এখন এমন এক সময়, যখন জনগণ চায় নেতৃত্ব হোক সরাসরি ও দৃশ্যমান। তিনি কী ভাবছেন, সরকার কী পরিকল্পনা করছে, নির্বাচন আদৌ কীভাবে এগোবে—এসব প্রশ্নে জাতির আগ্রহ অত্যন্ত তীব্র। তাঁর উপদেষ্টারা নানা সময়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টতা নেই, বরং রয়েছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। এই বিভ্রান্তি নিরসনে প্রয়োজন অধ্যাপক ইউনূসের সরাসরি বক্তব্য।

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে। এ অবস্থায় অধ্যাপক ইউনূস এবং সেনাবাহিনী প্রধান দুজনই সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বে থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার গুরুত্ব বাড়ছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতিও দিনকে দিন উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয়, সরকারি ভবনে তালা লাগানো, কমিশন ঘেরাও করা, যান চলাচল বন্ধ—এসব এখন প্রতিদিনের চিত্র। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও তাঁরাই বলেছিলেন, দেশে ফ্যাসিবাদ আর থাকবে না। এখন যখন মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না, তখন অধ্যাপক ইউনূসের নীরবতা সরকারকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

এতকিছুর মধ্যেও সংস্কার উদ্যোগের গতি মন্থর। সরকার গঠনের প্রায় ১০ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো কাঠামোগত সংস্কার দৃশ্যমান নয়। এই বিষয়ে জনগণ যেমন বিভ্রান্ত, তেমনি সন্দিহানও। বর্তমান সংকটে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা যেমন বাস্তবতা, তেমনি রাজনৈতিক সমাধানের রূপরেখা ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রদানও সময়ের দাবি। এই রোডম্যাপ একমাত্র অধ্যাপক ইউনূসের কণ্ঠেই গ্রহণযোগ্যভাবে জাতিকে জানানো সম্ভব।

এছাড়া একটি বড় অংশের জনগণ অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কার চেষ্টাকে সমর্থন করলেও মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় ইতিহাস নিয়ে তাঁর সরকারের বক্তব্য নিয়ে অসন্তুষ্ট। জাতির স্পষ্ট প্রত্যাশা—অধ্যাপক ইউনূস সরাসরি একাত্তরের পক্ষে অবস্থান জানান এবং ইতিহাস নিয়ে ধোঁয়াশা নিরসন করেন।

বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ‘বুলি পলপ্রিট’—যার অর্থ হলো, শাসক বা নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির এমন একটি অবস্থান, যেখান থেকে তিনি জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারেন। বর্তমান সময়টিতে বাংলাদেশ ঠিক এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, যখন সরকারের প্রধান নির্বাহীর শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও মানবিক বার্তা জাতিকে সাহস দিতে পারে।

জাপান সফরকালে পদত্যাগ নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ বিষয়ে তিনি দেশে কোনো মন্তব্য করেননি, তাই বিদেশে বলা উচিত নয়। এখন তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। জাতি জানতে চায়—তিনি কি এখন কিছু বলবেন?

জাতি এই প্রশ্নের উত্তর চায়। নির্বাচনের প্রস্তুতি কী পর্যায়ে, কোন কোন সংস্কার বাস্তবায়ন হবে, ক্ষমতা কখন নাগরিকদের হাতে ফিরবে—এসব প্রশ্নে তিনি সরাসরি বক্তব্য দেবেন, এমনটিই প্রত্যাশা।

এখনকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এক মিনিটেই সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে হাজারো বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নির্দেশনা দেওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর উচিত—নাগরিকদের সামনে থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া, উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা, মানুষকে আশ্বস্ত করা।

দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন সময় সরকারের প্রধান নির্বাহীর নীরবতা ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তিনি যদি সংস্কার ও নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরেন, তাহলে তা হবে একটি সুদৃঢ় ‘বুলি পলপ্রিট’—যেখান থেকে মানুষ আশার আলো দেখতে পাবে। জনগণ এখন অধ্যাপক ইউনূসের মুখেই সেই আলোর ভাষ্য শুনতে চায়।

Footer Section