গুমের অভিযোগ দিয়ে ন্যায়বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

News Desk

গুমের অভিযোগ দিয়ে ন্যায়বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ. Dhakainlight.com

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে নিজেকে গুমের শিকার দাবি করে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, দুই সাবেক আইজিপি, ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ দুপুরে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ তুলে দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, “আমি ন্যায়বিচার চাই। বিচারে যা সাব্যস্ত হবে, আমি মেনে নেব। তবে আমি চাই অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হোক।”

সালাহউদ্দিন বলেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং আইনি প্রস্তুতির কারণে অভিযোগ দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। গুমে জড়িতদের অনেকের নাম এখনও প্রকাশ্যে আসেনি বলেও জানান তিনি। তদন্তে আরও নতুন নাম বেরিয়ে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে অনেকেই গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছেন। এসব অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত টিম ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, বিচার বিভাগ বর্তমানে স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং এ ধরনের প্রকাশ্য বিচারপ্রক্রিয়া দেশবাসীর আস্থার জায়গা তৈরি করছে। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে এই ট্রাইব্যুনাল চালু থাকবে কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “অবশ্যই চলবে। এটি শুধু দলের অঙ্গীকার নয়, এটি জনগণের আকাঙ্ক্ষা। জুলাই শহীদদের রক্তের প্রতিশ্রুতি, যে আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।”

স্মরণযোগ্য, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতের বেলা ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। তাঁর স্ত্রী ও দলীয় নেতারা অভিযোগ করেন, তাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন। এরপর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। তাঁকে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে জানায় ভারতীয় পুলিশ।

ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করা হয়। ২০১৮ সালে মামলায় খালাস পেলেও ভারত সরকার আপিল করে, ফলে তাঁকে আরও কয়েক বছর ভারতে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলে খালাস পাওয়ার পর দেশে ফেরার অনুমতি পান তিনি। একই বছরের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “আমি দীর্ঘ আট বছর প্রিয় স্বজনদের থেকে দূরে থেকেছি। এখন আমি ফিরে এসেছি, কিন্তু যে অন্যায় আমার সঙ্গে হয়েছে, তার বিচার না হলে এই দেশে আর কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়। আমি বিচার চাই—যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকে গুমের শিকার হতে না হয়।”

তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশবাসীর সামনে সত্য প্রকাশের। বিচারপ্রক্রিয়ায় বিএনপি সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।”

Footer Section