জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা

News Desk

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা. Dhakainlight.com

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনা শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ নানা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ। গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।

আজকের আলোচনায় মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে কমিশন মূলত এমন কিছু বিষয় সামনে এনেছে, যেগুলোতে প্রথম ধাপে ঐকমত্য হয়নি। এর মধ্যে আছে সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি, বিচার বিভাগের কাঠামোগত বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও নিয়োগ পদ্ধতি, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, এক ব্যক্তি একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারা, এবং একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এই বিষয়গুলো।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বৈঠকের পর বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য ধারাবাহিকভাবে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হবে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে একটি আলোচনা এবং ঈদের পরে আরও কয়েক দফা আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেই সুপারিশগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম।

প্রথম দফার আলোচনায় ৩৩টি দলের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। এরপর গত ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম ধাপের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ঐকমত্য পাওয়া গেলেও গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা ও মতবিনিময়ের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসে একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সনদের মাধ্যমে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামো সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে চায় ঐকমত্য কমিশন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নেতারা তাদের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, এবং কমিশনের পক্ষ থেকেও নমনীয় অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোতে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

কমিশন ইতোমধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি প্রস্তাব ছক আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে মতামত সংগ্রহ করেছে। এ প্রক্রিয়ায় দলগুলো সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

Footer Section