অনলাইনেই জমে উঠেছে কোরবানির হাট, বাড়ছে বিক্রির পরিধি ও সুবিধা

News Desk

অনলাইনেই জমে উঠেছে কোরবানির হাট, বাড়ছে বিক্রির পরিধি ও সুবিধা. Dhakainlight.com

ঈদুল আজহা সামনে রেখে এবারও জমে উঠেছে অনলাইন কোরবানির হাট। গত কয়েক বছর ধরেই শহরবাসী ভিড় ঠেলে হাটে না গিয়ে ঘরে বসেই পশু কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ২০১০-এর দশকের শুরু থেকেই দেশে অনলাইনে পশু বিক্রির ধারা শুরু হলেও ২০২১ সালে এ বিক্রি বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছর প্রায় ২৬ হাজার গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল অনলাইনে, যার আর্থিক মূল্য ছিল ২০৬ কোটি টাকারও বেশি। উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২৫ সালে সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে এবং এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও গ্রাহকবান্ধব হয়েছে।

দেশের শীর্ষ খামার ও উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে ছবি, প্রজাতি, ওজন, বয়স, পরিচর্যা, টিকা সংক্রান্ত তথ্যসহ গরু, খাসি, ভেড়া ও ভাগা প্যাকেজ অফার দিচ্ছেন। অনেকে আবার কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাংসও পৌঁছে দিচ্ছেন ক্রেতার বাড়িতে।

অনলাইন কোরবানির হাটে পরিচিত নাম বেঙ্গল মিট। ১১ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে দেশি-বিদেশি জাতের গরু বিক্রি করছে। তাদের ওয়েবসাইট থেকে পশু কিনে ঘরে বসেই ডেলিভারি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি পশুর সঙ্গে ওজন, উচ্চতা, বয়স, প্রজাতি, যত্ন ও টিকা সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়া হচ্ছে। মূল্য শুরু ১ লাখ ৫১ হাজার টাকা থেকে, সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকার গরু পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাদের ওয়েবসাইটে খাসি ও ভেড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ছায়াবিথী অ্যাগ্রো ফার্ম গরুর ভাগা প্যাকেজ দিচ্ছে অনলাইনে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জানান, যারা পুরো গরু না কিনে অংশ নিতে চান, তারা অনলাইনে বুকিং দিয়ে ঈদের দিন কুরিয়ার সার্ভিসে মাংস পৌঁছে পাচ্ছেন। নারীদের মধ্যে এই ভাগা প্যাকেজ বেশ জনপ্রিয়। এ বছর অন্তত ৭০০ ভাগার বুকিং আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

উত্তরার দক্ষিণখানে হাইজেনিক অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি ২০১৭ সাল থেকে কোরবানির পশু বিক্রি করছে অনলাইনে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসাইন জানান, ২০২৪ সালে ১০০টির বেশি গরু বিক্রি করার পর এ বছর ২৫০টি গরুর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শতাধিক বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাত থেকেও অর্ডার আসছে।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে নেই। মানিকগঞ্জের কৃষক দেলোয়ার জাহান ফেসবুক ব্যবহার করে নিজের খামারের গরু বিক্রি করছেন। ঢাকার বছিলার নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া হকও অনলাইনে ৬৫-৭০টি গরুর অর্ডার গ্রহণ করছেন। তিনি জানান, প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালিত গরু অনলাইনে বিক্রি করে ঈদের একদিন আগে গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।

এছাড়াও সেবা এক্সওয়াইজেডের মতো প্রতিষ্ঠান গরুর খড় অনলাইনে বিক্রি করছে। শহরের মানুষ যারা গরুর খাবার জোগাড় করতে পারেন না, তারা ঘরে বসেই খড় কিনতে পারছেন। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক জানান, শহরের মানুষের জন্য এটি একটি কার্যকর সাপোর্ট।

প্রযুক্তিনির্ভর এই অনলাইন হাট কেবল পশু কেনাবেচার বিকল্পই নয়, বরং নিরাপদ, সময়-সাশ্রয়ী এবং কার্যকর এক সেবা হিসেবে দেশে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে এ প্রবণতা আরও বাড়বে এবং অনলাইন কোরবানির হাট বাংলাদেশের কোরবানির সংস্কৃতিতে স্থায়ী স্থান করে নেবে।

Footer Section