আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার গড়ে ভাগ্য বদলে ফেলছেন দেশের অনেক উদ্যোক্তা। কেউ চাকরির অবসরে, কেউ বা প্রবাসজীবনের ইতি টেনে, আবার কেউ কলেজের গণ্ডি না পেরিয়েই শুরু করছেন গরুর খামার। কম খরচ, তুলনামূলক কম ঝুঁকি আর লাভের হাতছানি অনেক তরুণকে এই খাতে নিয়ে আসছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নাহার ডেইরি ফার্ম ও বায়েজিদ লিংক রোডের নাহার ক্যাটেল ফার্মে রয়েছে যথাক্রমে ১৫০০ ও ৪০০-এর বেশি গরু। এসব ফার্ম পরিচালনা করছে নাহার অ্যাগ্রো। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় নির্বাহী মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
উন্নত জাতের গরু ছাড়া লাভজনক খামার কল্পনাই করা যায় না। সাধারণত নেপালি, গ্রিস, শাহিওয়াল, মিরকাদিম, হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান, আরসিসি এবং দেশি উন্নত জাতের গরু দিয়ে খামার শুরু করলেই ভবিষ্যৎ ভালো হয়।
গরুর স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি। রোগ হলে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই ভালো। ভেটেরিনারি চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থাকলে গরু সুস্থ থাকে এবং খামার সচল থাকে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হয় সতেজ কাঁচা ঘাসের ওপর। প্রতিটি গরুর ওজনের ৩-৪ শতাংশ হারে কাঁচা ঘাস এবং ১.১-১.২ শতাংশ দানাদার খাবার প্রয়োজন। ঘাসের ঘাটতি হলে সাইলেজ দেওয়া যেতে পারে, যা ভুট্টাসহ গাছ কেটে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে খাওয়ানো হয়। সুস্থতা বজায় রাখতে প্রতিদিন গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হয়। সঙ্গে চাই বিশুদ্ধ পানি।
খামার শুরু করতে চাইলে কমপক্ষে ২০টি গরু নিয়ে শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। একটি গরুর জন্য একজন দেখভালের লোক, পর্যাপ্ত খাবার, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধপত্রসহ নানা বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়। যদিও শুরুর খরচ কিছুটা বেশি, তবে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আয়ও হয় সন্তোষজনক।
তরুণদের মধ্যে খামার ব্যবসায় প্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে। কুমিল্লার লালমাইয়ের আরিফ মজুমদার কলেজ শেষ না করেই গড়ে তুলেছেন সুরুজ এগ্রো খামার। একই জেলার মৌলভীনগরের আবদুল লতিফ কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন রওশন এগ্রো। তাঁদের খামারের গরু প্রতিবছরই সরবরাহ হয় ঢাকার কাজীপাড়ার হাটে।
শুধু গরু বিক্রি করেই নয়, বোনাস হিসেবে খামার থেকে উৎপাদিত গোবর দিয়ে তৈরি হয় বায়োগ্যাস, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে—এতে গৃহস্থালি খরচও কমে আসছে।
আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পিত গরুর খামার দেশের আর্থিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু উদ্যোক্তার শ্রম আর মনোযোগই যথেষ্ট—এই খাতে রয়েছে আয়, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার এক অপার সম্ভাবনা।