রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেন যেটি বোঝাতে চাইল মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বকে

News Desk

রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেন যেটি বোঝাতে চাইল মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বকে. Dhakainlight.com

সাইবেরিয়ার গভীরে অবস্থিত রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের চালানো সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা কেবল সামরিক এক অভিযানের নাম নয়—এটি একটি কৌশলগত বার্তা, যা সমানভাবে প্রেরিত হয়েছে মস্কোর অভ্যন্তরে এবং পশ্চিমা বিশ্বে।

‘অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব’ নামে পরিচিত এই অভিযান সম্পর্কে ইউক্রেন দাবি করেছে, এতে রাশিয়ার প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও এই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি, তবুও সামরিক বিশ্লেষকেরা একে ইউক্রেনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত অভিযানের একটি বলেই বিবেচনা করছেন। ১৮ মাস ধরে এই হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, যেখানে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ছোট আকারের ড্রোনগুলো ট্রাকে করে পাচার করা হয় রাশিয়ার অভ্যন্তরে। এরপর তা চারটি ভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে টার্গেট করা হয় বিভিন্ন কৌশলগত বিমানঘাঁটি।

ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়ার দূরপাল্লার বোমারু বিমান টিইউ-৯৫, টিইউ-২২ এবং টিইউ-১৬০, যেগুলো নতুনভাবে তৈরি করা আর সম্ভব নয়। বিশ্লেষক ওলেকসান্দর কোভালেনকোর মতে, এসব বিমান কেবল অস্ত্র নয়, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষার এক অনন্য শক্তি। এগুলোর ক্ষতি শুধুই প্রতিস্থাপনের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং একেবারে অস্ত্রভাণ্ডারের কাঠামোকেই দুর্বল করে দেয়।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সেরহি কুজান বলেন, বিশ্বের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনা করে শত্রুপক্ষের ভিতরে এমন অপারেশন করেছে, এমন নজির নেই। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা আঘাত করেছি এমন ৪০টি বিমানে, যেগুলো কিয়েভকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এমন সফলতা আগে আসেনি।’

এই হামলা তাই কেবল একটি সামরিক বিজয় নয়—এটি ইউক্রেনের আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতার প্রকাশ। একইসঙ্গে এটি একটি বার্তা, যা কেবল রাশিয়াকে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকেও উদ্দেশ করে বলা হয়েছে: ইউক্রেন এখনো হেরে যায়নি, এবং তারা এখনো যুদ্ধ করছে।

বিবিসি ইউক্রেনিয়ান সার্ভিসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক উচ্চপদস্থ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—মার্কিনরা মনে করে আমরা ইতোমধ্যে যুদ্ধ হেরে গেছি। এটাই সব সমস্যার গোড়ার জায়গা।’ একই সুর পাওয়া যায় সাংবাদিক ইলিয়া পোনোমারেঙ্কোর মন্তব্যে, যেখানে তিনি বলেন, ‘একটি দেশ যখন আগ্রাসনের শিকার হয়, তখন তাদেরকে “শান্তির জন্য আত্মসমর্পণ করো” বলে নিরুৎসাহ করা এক ধরনের অবমাননা।’

এই অভিযানের মধ্য দিয়ে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবারো জোরালো অবস্থানে চলে এসেছেন। ইস্তাম্বুলে ক্রেমলিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলাকালে ইউক্রেন এভাবে হামলা চালিয়ে দেখিয়ে দিল—তারা এখনো হার মানেনি। বরং সুযোগ পেলে পাল্টা আঘাত হানতে পিছপা হবে না।

‘বিজনেস ইউক্রেন’ সাময়িকীর এক বিশ্লেষণে বলা হয়, “সব বাধা পেরিয়ে ইউক্রেন দেখিয়ে দিল তাদের হাতে এখনো খেলার মতো ‘কার্ড’ আছে। এবং আজ জেলেনস্কি খেললেন ড্রোনের রাজা হয়ে।”

সবশেষে, এই ড্রোন হামলা শুধু কয়েকটি বিমানঘাঁটি নয়, একটি নীতির ওপরই প্রশ্ন তুলেছে—যেখানে পশ্চিমা সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে এবং শান্তির নামে আত্মসমর্পণের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেন বার্তা দিয়েছে: তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, আত্মসমর্পণ নয়, বিজয়ের আশায়।

Footer Section