যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ককে বড় একটি সোনার চাবি উপহার দিয়েছেন। শুক্রবার ওভাল অফিসে মাস্কের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প এই সম্মানসূচক উপহার তুলে দেন। একটি কাঠের বাক্সে সংরক্ষিত চাবিটি তুলে দেওয়ার সময় ট্রাম্প বলেন, “এ ধরনের উপহার আমি কেবল বিশেষ মানুষদেরই দিই। দেশের পক্ষ থেকে ইলন মাস্ককে ধন্যবাদ জানাতে এই উপহার দেওয়া হলো।”
মাস্ক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মাস্ক নানা ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নেন। সরকারি বিভিন্ন খাতে খরচ কমানো এবং কার্যকারিতা বাড়ানোই ছিল তাঁর মূল দায়িত্ব। গত চার মাসে এই বিভাগ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয়ের দাবি করেছে। যদিও বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়, এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশের সুনির্দিষ্ট প্রমাণই কেবল পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এটা সরকারি দক্ষতা বিভাগের শেষ নয়, বরং একটি নতুন সূচনা।” তিনি মাস্কের প্রশংসা করে বলেন, “মাস্ক যেসব সংস্কার চালিয়েছেন, তা কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও কার্যকর।”
মাস্ক জানান, তিনি ট্রাম্পের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবেই পাশে থাকতে চান। তাঁর ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট যখন চাইবেন, আমি প্রস্তুত থাকব।” ট্রাম্পও এ বক্তব্যে সায় দিয়ে বলেন, “আমিও তা–ই আশা করি।”
ওভাল অফিসের সেই অনুষ্ঠানে মাস্কের পরনে ছিল কালো রঙের একটি টি-শার্ট, যাতে সাদা অক্ষরে লেখা ছিল ‘ডিওজিই ফাদার’। তাঁর মাথায় ছিল একটি কালো ক্যাপ। তবে অনুষ্ঠানের চেয়েও আলোচনায় ছিল মাস্কের ডান চোখের নিচে দেখা দেওয়া কালো কালশিটে দাগ, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে মাস্ক নিয়মিত কেটামিন নামক মাদক ব্যবহার করতেন। এতে তাঁর মূত্রাশয়ে সমস্যা দেখা দেয় এবং মুখে আঘাতের চিহ্নও থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তবে মাস্ক এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
সংবাদ সম্মেলনে কালশিটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাস্ক বলেন, “এটা আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে মজা করার ফল। আমি তাকে বলেছিলাম—‘চলো, আমার মুখে একটা ঘুষি মারো’। আর সে সত্যি ঘুষি মেরে দেয়। তখন বুঝলাম, পাঁচ বছরের বাচ্চার ঘুষিও কম নয়!”
মাস্কের এই মন্তব্য উপস্থিতদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি করে। তবে তিনি সাংবাদিকদের মাদক সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যান এবং বিষয়টি নিয়ে আর কিছু বলেননি।
এমন এক সময়ে মাস্কের বিদায় ও এই সম্মাননা প্রদান ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে মাস্কের ভূমিকা, প্রভাব এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ও কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে—তা নিয়ে নানা মহলে রয়েছে কৌতূহল।