সরকারের অন্তত ৩৮টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের শীর্ষপদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। সচিব, মহাপরিচালক, চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ না হওয়ায় জনসেবায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, ফলে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত থমকে আছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের এমডি পদ খালি অক্টোবর ২০২৪ থেকে। অতিরিক্ত সচিব বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তিনি নিয়মিত অফিস করতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন দপ্তরের কর্মকর্তারা। একইভাবে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের এমডি পদও অনেক দিন ধরে শূন্য।
বর্তমানে তিনটি মন্ত্রণালয়—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কেউ নেই। পাশাপাশি মহিলা অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি, মিল্ক ভিটা, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, জাতীয় জাদুঘরসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রধান পদও শূন্য রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে বর্তমানে ৪২৪ জন কর্মকর্তার বিপরীতে প্রেষণসহ পদ রয়েছে ৩৯৫টি। অর্থাৎ পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, “অনেকেই পছন্দের লোক বসাতে চায়, এ কারণে নিয়োগে দেরি হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।”
নিয়োগ বিলম্বের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রথমত, নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসে। দ্বিতীয়ত, সরকারি শীর্ষপদে নিয়োগে নতুন করে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সুপারিশ নিতে সময় লাগছে। তৃতীয়ত, যোগ্য কর্মকর্তার অভাব কিংবা তাঁদের রাজনৈতিক সংযুক্তি নিয়ে আপত্তি থাকায় নিয়োগে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
এদিকে, একাধিক দপ্তরে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে একাধিক দায়িত্ব পালনের নজিরও রয়েছে। যেমন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়া একসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা ওয়াসার এমডি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব বা মহাপরিচালকরা শুধুমাত্র দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ করতে পারেন। তাঁদের পক্ষে নতুন আইন প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ বা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)-এর মহাপরিচালক পদ খালি রয়েছে সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে। যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, “নিয়মিত প্রধান থাকলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সহজ হতো।”
নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা জনস্বার্থ ও প্রশাসনিক দক্ষতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষপদগুলো দ্রুত পূরণ না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশব্যাপী আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তাই অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে জনস্বার্থে দ্রুত পদ পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।