১৯ শয্যার ভবনে চলছে ৫০ শয্যার ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চরম সংকটে চিকিৎসাসেবা

News Desk

১৯ শয্যার ভবনে চলছে ৫০ শয্যার ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চরম সংকটে চিকিৎসাসেবা. Dhkainlight.com

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। ৫০ শয্যার হাসপাতালে কার্যক্রম চলছে মাত্র ১৯ শয্যার একটি ভবনে। জনবল সংকট, যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতা এবং অপারেশন থিয়েটার অচল থাকায় চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রবিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। প্যাথলজি বিভাগে গিয়েও অনেকে ফিরে যাচ্ছেন, কারণ পরীক্ষা করার যন্ত্র নষ্ট। রসুলপুর গ্রামের ডলি বেগম তাঁর মেয়েকে পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এনেছিলেন, কিন্তু পরীক্ষা করাতে না পেরে গেটের সামনের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন।

১৯৮২ সালে স্থাপিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল, যা পরে উন্নীত হয় ৫০ শয্যায়। কিন্তু পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা ভেঙে ফেলা হয়। এখন কেবল একটি তিনতলা ভবনের ১৯ শয্যা দিয়েই পুরো স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বিপুল রায় জানান, প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী আসে, ভর্তি হয় গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের অনেক সময় মেঝেতে রাখতে হয়।

জনবল সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ৫০ শয্যার জন্য ১৭ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন ১৪ জন। মেডিকেল অফিসার পদের ৪টির মধ্যে একটি শূন্য, অবেদনবিদ নেই দীর্ঘদিন। তৃতীয় শ্রেণির ৭০টি পদের মধ্যে ২৩টি ও চতুর্থ শ্রেণির ২৩টি পদের মধ্যে ১২টি শূন্য।

অপারেশন থিয়েটার ২০১৮ সালে উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি। এক্স-রে মেশিন অ্যানালগ, কিন্তু কক্ষ না থাকায় ব্যবহারের উপযোগী নয়। প্যাথলজি যন্ত্রপাতি প্রায় দুই মাস ধরে বিকল। ফলে রক্ত ও প্রস্রাবসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট তাপস কুমার বসাক জানান, যন্ত্রের ত্রুটির কারণে পরীক্ষাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

চোখের চিকিৎসাও সীমিত। হাসপাতালে কোনো চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের পরামর্শে সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্টাফ নার্সরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। জটিল রোগীদের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অবেদনবিদ না থাকায় হাসপাতালে কোনো অস্ত্রোপচার হয় না, যার কারণে প্রসূতিদের দুর্ভোগ চরমে। আশাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন জানান, সম্প্রতি তাঁর এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বেসরকারি ক্লিনিকে নিতে বাধ্য হন, যার ফলে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসিব আহসান জানান, পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলার পর থেকে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভবন ও জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

এই সংকটের মধ্যেও সেবার মান ধরে রাখতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

Leave a Comment

Footer Section