জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রাজস্ব প্রশাসনে চলছে অচলাবস্থা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনসহ সারা দেশের কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের দপ্তরগুলোতে শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি।
আন্দোলনরত কর্মকর্তারা নিজেদের দপ্তর ছেড়ে এসে অবস্থান নিয়েছেন এনবিআরের নিচতলায়। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, সরকার সম্প্রতি যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করেছে, তা বাতিল করতে হবে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাস্টম হাউস ও শুল্কস্টেশন ব্যতীত দেশের সব কর, শুল্ক ও ভ্যাট অফিসে আজ দিনের পুরো সময় ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার বাইরের দপ্তরগুলোতেও কর্মবিরতির একই চিত্র দেখা গেছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পাঁচ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর আওতায় আগামীকাল রোববারও একইভাবে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মবিরতির আওতায় থাকছে না। ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত বাকি সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি কার্যকর থাকবে।
গত মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের তিনজন উপদেষ্টা—অর্থ উপদেষ্টা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ও প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত উপদেষ্টার বৈঠক হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এরপর বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় আশ্বাস দেয়, রাজস্ব প্রশাসন আলাদা করার প্রস্তাব নিয়ে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে এবং শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা হবে।
তবে এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মতে, হঠাৎ করে গঠিত নতুন বিভাগ দুটির মাধ্যমে এনবিআরের দীর্ঘদিনের কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে, যা রাজস্ব প্রশাসনের কার্যকারিতা ও স্বতন্ত্রতা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এনবিআর ভবনের সামনে কর্মবিরতি চলাকালে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেন। তাঁদের স্লোগান ছিল—‘রাজস্ব প্রশাসন ভেঙে নয়, শক্তিশালী করো’, ‘অধ্যাদেশ বাতিল করো’, ‘এনবিআরের অবমূল্যায়ন চলবে না’।
সরকারি রাজস্ব আহরণের প্রধান দায়িত্বে থাকা একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনবিআরের ভবিষ্যৎ গঠনতন্ত্র নিয়ে এমন অস্থিরতা সারা দেশের রাজস্ব কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, বিষয়টির দ্রুত সমাধান না হলে রাজস্ব ঘাটতি, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে জটিলতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।