যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অনুদানে ব্যয় কমিয়ে দেবেন। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অর্থদাতা হিসেবে আলোচনায় ছিলেন মাস্ক। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি কাতারে অনুষ্ঠিত একটি অর্থনৈতিক সম্মেলনে মাস্ক বলেন, রাজনীতিতে আগের মতো আর বড় অঙ্কের অনুদান দেবেন না। তিনি স্বীকার করেন, ট্রাম্পের প্রচারে তিনি ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছেন। পাশাপাশি জানান, তিনি আগামী পাঁচ বছর টেসলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে থাকতে চান।
কয়েক সপ্তাহ আগে মাস্ক জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে হোয়াইট হাউস যে বিতর্কিত ‘ডজি’ বিভাগ গঠন করেছিল এবং তাঁকে যার প্রধান করা হয়েছিল, তিনি সেখান থেকে সরে দাঁড়াবেন।
রাজনীতিতে ভবিষ্যতে ব্যয় করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাস্ক বলেন, ‘আমি মনে করি, ইতিমধ্যেই যথেষ্ট করেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি, তখন বিবেচনা করব। তবে আপাতত এর প্রয়োজন দেখছি না।’
মাস্ক অতীতে রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় ছিলেন না। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় তিনি বড় অঙ্কের অর্থায়ন শুরু করলে তাঁর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান—যেমন স্টারলিংক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স—নজরদারির মুখে পড়ে। ট্রাম্প প্রশাসনে তাঁর প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তাঁর কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে রয়েছে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে, যা মাস্কের জন্য রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ডজি বিভাগের অধীনে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্তের জেরে টেসলার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি কমতে শুরু করে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। টেসলার পরিচালনা পর্ষদও প্রকাশ্যে মাস্কের প্রতি অসন্তোষ জানায়। তাঁদের অভিযোগ, মাস্ক হয়তো টেসলায় প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিচ্ছেন না, অথচ এ কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে মাস্কের প্রভাবও কমে এসেছে। চলতি বছরের শুরুতে উইসকনসিনে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী হেরে যান, যদিও মাস্ক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল প্রার্থীর প্রচারে ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছিল।
তবে ট্রাম্প পরবর্তীতে মাস্কের পরামর্শ উপেক্ষা করে আমদানি শুল্ক আরোপ করেন, যা মাস্কের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি করে। ডজি বিভাগে মাস্ক যে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় সমালোচনাও বেড়েছে। যদিও মাস্ক এ প্রকল্পকে এখনো কার্যকর বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “আমরা কেবল উপদেষ্টা। সেই ভূমিকা থেকে আমরা যথাসাধ্য করছি।”
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা দাবি করেছে, ডজি বিভাগের ব্যয় সংকোচনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত অনেক মানবিক প্রকল্প, যেমন এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ কার্যক্রম, বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মাস্ক অবশ্য এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেননি।
সমালোচনা প্রসঙ্গে মাস্ক বলেন, টেসলার ওপর হামলা ও সমালোচনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে আঘাত পেয়েছেন। তবে রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই তাঁর। তাঁর কথায়, “যা করার দরকার ছিল, সেটাই করেছি।”
টেসলার ব্যবসায় তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাস্ক জানান, ইউরোপের বাইরে কোম্পানির ব্যবসা ভালোই চলছে। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শেয়ারের দাম বেড়েছে। চাহিদা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্লুমবার্গের সাংবাদিক মিশাল হোসেন জানতে চান, টেসলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে থাকার প্রতিশ্রুতি কি পারিশ্রমিকের সঙ্গে যুক্ত? বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মাস্ক টেসলা থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বেতন পাওয়ার দাবি করেছেন—যা যুক্তরাষ্ট্রের আদালত ইতিমধ্যে দুইবার খারিজ করেছে।
এ প্রশ্নে মাস্ক বলেন, “এটা টাকা নয়, বরং যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন।” তিনি টেসলায় নিজের অবস্থান ধরে রাখার পেছনে ব্যক্তিগত অর্থের চেয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমাকেই প্রাধান্য দেন বলে মন্তব্য করেন।
সব মিলিয়ে, ইলন মাস্ক রাজনীতিতে ব্যয় কমিয়ে ব্যবসায় আরও মনোযোগী হতে চাইছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর এ সিদ্ধান্ত টেসলার ভবিষ্যৎ এবং তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।