ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ঘোষণা দিলেও গাজা উপত্যকায় এখনো কোনো ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অনুমতির অভাবে ত্রাণসামগ্রী গাজার মানুষের হাতে পৌঁছায়নি।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, সোমবার শিশুখাদ্যবাহী চারটি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় প্রবেশ করে। পরদিন মঙ্গলবার আরও কিছু ট্রাকে করে আটা, ওষুধ ও পুষ্টিসামগ্রী কেরেম শালোম সীমান্ত পার হয়। তবে গাজায় কার্যত কোনো বিতরণ সম্ভব হয়নি।
ডুজারিক বলেন, “ইসরায়েল আমাদের কেরেম শালোম সীমান্তে ত্রাণসামগ্রী নামিয়ে রাখতে বলেছে। তবে সেগুলো গাজা উপত্যকার ভেতরে আমাদের কর্মীরা ঢুকে সংগ্রহ করতে পারেননি। আজ আমাদের একটি দল কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনুমতি পায়নি।”
এর আগে একই দিন জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাককে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে অনুমতির ঘোষণার পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও কার্যত কোনো ত্রাণ গাজাবাসীর হাতে পৌঁছায়নি।
জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “ইসরায়েল যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তা সমুদ্রে একফোঁটা পানির মতো। গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে, অবিলম্বে ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা দরকার।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে গাজায় বিমান ও স্থল অভিযানের মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
ইসরায়েল বলছে, তাদের সামরিক অভিযান এবং অবরোধের লক্ষ্য হলো হামাসের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর ত্রাণ অপব্যবহার ঠেকানো। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি ত্রাণ বিতরণ দল এ মাসের শেষ দিকে গাজায় কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে। তারা গাজায় একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ মডেল বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই উদ্যোগ নিরপেক্ষ নয় বলে তারা এতে অংশ নেবে না।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষে লাখো মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রাণ না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে।
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বারবার আহ্বান জানালেও বাস্তবে ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ইসরায়েলের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।