চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘‘এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন।’’
সোমবার (১৯ মে) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিকে নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়, অথচ নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, সরকার খুবই আইন প্রয়োগ করছে।’’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘‘শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়, আর ট্রাইব্যুনাল বারবার পেছানো হচ্ছে।’’
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। আজ সোমবার আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ তার পোস্টে আরও বলেন, ‘‘ইন্টেরিম সরকারের ৬২৬ জনের তালা কোথায়? সেই তালিকাভুক্তদের নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন একজন অভিনেত্রীকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বলা হচ্ছে, এটি বিচারের উদাহরণ!’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এটা কি ন্যায্য বিচার, না কি শুধুই মনোযোগ সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা?’’
ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, শোরগোল উঠেছে সংস্কৃতি অঙ্গনেও। একের পর এক অভিনয়শিল্পীরা প্রকাশ করছেন তাঁদের ক্ষোভ ও উদ্বেগ।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন লিখেছেন, ‘‘কি এক লজ্জা। ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটার কিছুই করার ছিল না। আমি এমন পরিস্থিতি এবং সিস্টেম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে ‘ন্যায্য অধিকার’ শব্দটা সাধারণ নয়। এটা অগ্রহণযোগ্য।’’
অভিনেতা খায়রুল বাশার বলেন, ‘‘তিনি একজন অভিনেত্রী। চরিত্র অনুযায়ী কাজ করাই তাঁর পেশা। আমার জানামতে, তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন বা রাজনীতি করেন না। এমনকি সরকারের পক্ষে বিটিভিতে মায়াকান্নাও করেননি। তাহলে কেন একজন অভিনেত্রীকে সিনেমার চরিত্রকে কেন্দ্র করে হেনস্তা করা হচ্ছে? এটা খুবই দুঃখজনক।’’
নুসরাত ফারিয়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্র, মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
তাঁর হঠাৎ গ্রেপ্তার, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ‘মনোযোগ ডাইভারশন’ মন্তব্য এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিবাদ—সবকিছু মিলিয়ে এই ঘটনা একটি আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আইনি প্রক্রিয়া কোন দিকে মোড় নেয় এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হয়।