ডালপালা কেটে তোলা হয়েছে বাকল, খাগড়াছড়িতে মৃতপ্রায় সড়কের পাশের শতাধিক গাছ

News Desk

ডালপালা কেটে তোলা হয়েছে বাকল, খাগড়াছড়িতে মৃতপ্রায় সড়কের পাশের শতাধিক গাছ. dhakainlight.com

খাগড়াছড়ির তিনটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক গাছ এখন মৃত্যুপথযাত্রী। গাছগুলোর ডালপালা কেটে ফেলার পাশাপাশি তোলা হয়েছে বাকল বা ছাল। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি ছায়াঘেরা এই সড়কগুলো হলো খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি, পানছড়ি-খাগড়াছড়ি এবং দীঘিনালা-বাবুছড়া সড়ক।

এই সড়কগুলোর পাশে প্রায় হাজারখানেক রেইনট্রি, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সঞ্চালন লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে সময় সময় গাছের ডালপালা ছাঁটাই করে থাকে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ডাল কাটা ছাড়াও গাছের ছাল তোলা হয়েছে, যা গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাছগুলোর ডালপালা কেটে ফেলার পর কিছু গাছের গোড়া থেকে ছাল তুলে নেওয়া হয়। এতে গাছ দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নিযুক্ত শ্রমিকরাই এ কাজ করেছে বলে দাবি করেন তাঁরা। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা ডাল কাটা স্বীকার করলেও বাকল তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

সড়ক বিভাগের মালিকানাধীন এসব গাছের অধিকাংশই লাগানো হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে। গাছগুলোর বয়স এখন ২৫ থেকে ৩০ বছর। খাগড়াছড়ি সদর থানায় গত বছর গাছ নষ্ট করার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল সড়ক বিভাগ। ওই সময় বিদ্যুৎ বিভাগকে এ নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।

সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান জানান, গাছের মালিকানা সড়ক বিভাগের হলেও ডাল কাটার আগে বিদ্যুৎ বিভাগ কখনও তাদের জানায় না। তিনি বলেন, “আমরা শুনেছি আবারও গাছের ছাল তোলা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের ঠাকুরছড়া এলাকায় দেখা গেছে, আটটি গাছের ছাল তোলা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি ইতোমধ্যে কেটে নেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি মরে গিয়ে এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুকিছড়া, শিবমন্দির, গাছবান, ছোটনালা, গিরিফুল, মঞ্জু আদাম ও কুড়াদিয়া এলাকাসহ অন্তত ৫০টির মতো গাছের বাকল তোলা হয়েছে। দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের শান্তিপুর, ব্রিকফিল্ড, বানছড়া ও কার্বারি টিলা এলাকাতেও গাছের ছাল তুলে নেওয়া হয়েছে।

পথচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গাছের ছাল তোলার কারণে শত শত গাছ মারা গেছে। ফলে সড়কের ছায়া হারিয়ে গেছে, যা আগে যাত্রীদের স্বস্তি দিত।

ঠাকুরছড়ার বাসিন্দা দিনেশ কুমার ত্রিপুরা বলেন, “বর্ষায় ডাল কাটার সময় কয়েকটি পুরোনো রেইনট্রিগাছের ছাল তুলে নেওয়া হয়। এরপর মরা ডাল রাস্তায় পড়তে শুরু করে, যা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।”

গাছবান এলাকার বাসিন্দা রবিন চাকমা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ছাল তোলার কারণে গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। বাতাসে গাছের মরা ডাল পড়ে গিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

দীঘিনালার শান্তিপুর এলাকার মিতালী চাকমা বলেন, “একসময় এই সড়কের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করতাম। এখন দেখছি, বছরখানেকের মধ্যে গাছগুলো মারা যাচ্ছে।”

পরিবেশকর্মী ও বেলা নেটওয়ার্কের সদস্য আবু দাউদ বলেন, “সরকারি কোনো বিভাগের এই ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। গাছ কেটে বা ছাল তুলে পরিবেশ ধ্বংস করা একধরনের অপরাধ, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

বিদ্যুৎ বিতরণ ও সম্প্রসারণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম বলেন, “প্রতিবছর দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুতের তারের কাছাকাছি থাকা গাছের ডাল কাটা হয়। তবে এ বছর এখনো কোনো লাইনে ডাল কাটা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “যদি দেখা যায় কেউ গাছের ছাল তুলেছে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এসব কাজ করে তাদের বাদ দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে।”

গাছ কেটে বা ছাল তুলে গাছ মেরে ফেলা শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবন-জীবিকাকেও হুমকির মুখে ফেলছে—এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

Leave a Comment

Footer Section