নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৮:৩১
চাকরি ফিরে পাওয়াসহ চার দফা দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সেনাবাহিনী থেকে বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত সাবেক সদস্যরা। আজ রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে দিনভর প্রেসক্লাব এলাকায় চলেছে অবস্থান, স্লোগান ও প্রশাসনের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি।
চাকরিচ্যুতরা ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম (বিসিপি)’ ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নেন। তাঁদের দাবি—বিচারহীনভাবে চাকরিচ্যুতি, পুনর্বহাল না হওয়া, আবেদন নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা এবং মানবিক বিবেচনায় পুরোনো মামলা পুনঃবিবেচনা।
গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা
বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান। তিনি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রেসক্লাব থেকে বের হতে চাইলে চাকরিচ্যুত সদস্যরা তাঁর গাড়িবহরের সামনে শুয়ে পড়েন। এতে প্রেসক্লাবের ভেতরে আটকা পড়ে যান কর্মকর্তারা।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অচলাবস্থা বিরাজ করে। আন্দোলনকারীরা সরাসরি দাবি জানান, আলোচনার আশ্বাস নয়—সমাধান চাই এখনই, প্রেসক্লাবেই।
কী বললেন সেনা কর্মকর্তা?
আলোচনার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,
“তাদের দাবি-দাওয়াগুলো শুনেছি, নোট করেছি। প্রত্যেকে আলাদা করে আবেদন করলে, কেসের ভিত্তিতে মেরিট অনুযায়ী বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করব। তবে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখাও জরুরি।”
আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া
চাকরিচ্যুতদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁরা সকাল ৭টার পর থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। জাহাঙ্গীর গেটমুখী পদযাত্রার পরিকল্পনা থাকলেও পুলিশি বাধায় তা সম্ভব হয়নি।
তাঁরা বলেন,
“আমরা বারবার আবেদন করেছি, আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু বাস্তব সমাধান পাইনি। আজ যদি এখানেই সমাধান না আসে, আন্দোলন চলবে।”
আটক ও আবেদনের হালচিত্র
এক আন্দোলনকারীকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানা যায়। এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার আমিনুর বলেন, “ওটা আইনগত বিষয়। যথাযথ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১০০টির বেশি মামলার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
অচলাবস্থার সমাপ্তি হয়নি
সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে অবস্থান করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। আর সেনা কর্মকর্তা আমিনুর রহমানও অবস্থান করেন ভেতরে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপ কী হবে, সেটি নির্ভর করছে প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
📍 সংক্ষিপ্তভাবে দাবিসমূহ
১. চাকরিতে পুনর্বহাল
২. ন্যায়বিচার ও তদন্তের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি
৩. পূর্বের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি
৪. মানবিক বিবেচনায় পুনঃবিবেচনার সুযোগ
এই আন্দোলন এখন শুধু চাকরি ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়, বরং একটি দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপস্থিত আন্দোলনকারীরা।