শুভাঢ্যা খাল এখন প্লাস্টিক বর্জ্যের ভাগাড়, শুরু হচ্ছে পুনঃখননের উদ্যোগ

News Desk

শুভাঢ্যা খাল এখন প্লাস্টিক বর্জ্যের ভাগাড়, শুরু হচ্ছে পুনঃখননের উদ্যোগ. Dhakainlight.com

একসময় প্রাণবন্ত ও সচল জলপথ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল এখন পরিণত হয়েছে ময়লা–আবর্জনা ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ভাগাড়ে। ঢাকার পাশেই অবস্থিত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থল হলেও বর্তমানে দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, এবার খালটি উদ্ধার ও পুনরুজ্জীবনের জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে ৩১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প।

স্থানীয়দের দাবি, একসময় এই খালের পানি কৃষিকাজ, মাছ ধরা এবং নৌ চলাচলে ব্যবহৃত হতো। এখন পুরো খালজুড়ে দখল, পলিথিন ও বারোয়ারি বর্জ্যের স্তুপ। চর কালীগঞ্জ থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত বিস্তৃত খালটির বিভিন্ন অংশে পানির চিহ্নই নেই। কিছু কিছু জায়গায় খাল এতটাই ভরাট হয়ে গেছে যে, সাঁকো ছাড়াই মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে।

বিশেষ করে চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা প্লাস্টিক ও কারখানার বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। আশপাশের শত শত দোকান ও শিল্পকারখানার সব বর্জ্যই পড়ছে খালের মধ্যে। অন্যদিকে, চিতাখোলা থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত অংশে খননকাজের জন্য খালের মাটি দুই পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। তবে সেখানেও পানির প্রবাহ নেই, ফলে খালটির প্রকৃত স্বরূপ আর অবশিষ্ট নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে খালেই ময়লা ফেলছে। দিনে মাত্র একবার ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, যা মোটেও যথেষ্ট নয়। দোকানি ও বাসিন্দারা বলছেন, বর্জ্য রাখার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় তাঁরা খালকেই বেছে নিচ্ছেন।

খালপাড়ের বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদ বলেন, “প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য জমে, তাতে দিনে অন্তত তিন-চারবার ময়লা সংগ্রহ করা হলে খালে ময়লা ফেলার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমতো।”

অপরদিকে, দখলের চিত্র আরও ভয়াবহ। খালের পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। ফারুক মার্কেট সংলগ্ন কদমতলীতে গিয়ে দেখা যায়, দোকানিরা সরাসরি খালেই ময়লা ফেলছেন। জানতে চাইলে একজন পেঁয়াজ বিক্রেতা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “ময়লা তাহলে কোথায় ফেলব?”

কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, খালের পাশে অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। খাল খননের সময় এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

সর্বশেষ খালটি পরিদর্শন করে সরকারের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খাল পুনঃখননের কাজ আগামী জুন থেকে শুরু হবে এবং ২০২৬ সালের জুনে তা শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। খননের পাশাপাশি খালের পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাও করা হবে।

আগানগরের বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, “এই খালকে বাঁচানো মানেই কেরানীগঞ্জকে টিকিয়ে রাখা। আগের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। নইলে শুভাঢ্যার ভাগ্যে জুটবে শুধু কোটি টাকার ব্যর্থতার গল্প।”

খালের দুর্দশা এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উদ্যোগ—দুই মিলে শুভাঢ্যার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার ওপর। সময়ই বলে দেবে, এই প্রকল্প শুভাঢ্যা খালের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে কি না।

Leave a Comment

Footer Section