এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ গঠন: সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে মনে করছেন সেলিম রায়হান

News Desk

এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ গঠন: সাহসী ও সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে মনে করছেন সেলিম রায়হান. Dhakainlight.com

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি পৃথক বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠনের সিদ্ধান্তকে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

তাঁর মতে, এই কাঠামো বাংলাদেশের কর প্রশাসনকে আধুনিকীকরণের পথে নিয়ে যেতে পারে। নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের কাজ আলাদা করা হলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দক্ষতা বাড়বে।

একটি বিভাগ থাকবে রাজস্ব নীতি ও আইন প্রণয়নের দায়িত্বে, আরেকটি দেখবে রাজস্ব আদায় ও বাস্তবায়নের বিষয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উত্তম চর্চার (Best Practice) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে রাজস্ব প্রশাসন দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও রাজস্ব প্রয়োজনের সঙ্গে আরও ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে পারবে।

তবে সেলিম রায়হান সতর্ক করেছেন যে, এই উদ্যোগ সফল করতে হলে বৃহত্তর করব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের করের আওতা বাড়াতে হবে, করছাড় কমাতে হবে এবং পরোক্ষ করের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে আয়করসহ প্রত্যক্ষ করের ভূমিকা বাড়াতে হবে।”

দেশের ধনী জনগোষ্ঠী কর ফাঁকি দেয়—এমন বাস্তবতায় তাঁদের করের আওতায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

একই সঙ্গে করব্যবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সেলিম রায়হান। তাঁর মতে, দুর্নীতি দমন ছাড়া সবচেয়ে ভালো কাঠামো থেকেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না। কর আইন, আপিল ও বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নকেও তিনি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন।

এই সংস্কার প্রক্রিয়ার কিছু চ্যালেঞ্জও তুলে ধরেছেন তিনি। এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা এর বিরোধিতা করছেন, বিশেষ করে প্রশাসনিক ক্যাডারের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে। অতীতে এমন বিরোধিতার কারণে বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যবসায়ী সমাজের একটি অংশও এ পরিবর্তনের বিরোধী হতে পারে, কারণ তারা বর্তমান ব্যবস্থার দুর্বলতা থেকে সুবিধা নিচ্ছেন।

তিনি মনে করেন, নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের সহযোগিতা ছাড়া নতুন ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। ফলে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের পথ তৈরি করতে হলে করব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী, স্বচ্ছ এবং কার্যকর করতে হবে।

সেলিম রায়হান মন্তব্য করেছেন, “এই সংস্কার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে সফলতা নির্ভর করবে করব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার, দক্ষ বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিরোধ মোকাবিলার সক্ষমতার ওপর।”

এই উদ্যোগকে কার্যকর রূপ দিতে হলে কেবল কাঠামোগত পরিবর্তন নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং জবাবদিহিমূলক পরিবেশ।

Leave a Comment

Footer Section