‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ শুরু

News Desk

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ শুরু. Dhakainlight.com

ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পাল্টা জবাবে পাকিস্তান শনিবার ভোর থেকে একটি নতুন সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যার নাম ‘অপারেশন বুনইয়ান–উন–মারসুস’। আরবি এই শব্দগুচ্ছের অর্থ ‘সুদৃঢ় প্রাচীর’। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এক বিবৃতিতে এই অভিযানের নাম প্রকাশ করেন এবং জানান, এই অভিযান ভারতের আগ্রাসনের জবাব হিসেবেই শুরু করা হয়েছে।

পাকিস্তান জানিয়েছে, এই অভিযানের আওতায় তারা ভারতের উত্তরাঞ্চলের একাধিক সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অমৃতসরের বিয়াস এলাকায় অবস্থিত ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কেন্দ্র, পাঠানকোট বিমানঘাঁটি এবং কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই আক্রমণের মাধ্যমে তারা কেবল সেসব লক্ষ্যবস্তু বেছে নিয়েছে, যেগুলো থেকে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আগে হামলা চালানো হয়েছিল।

এর আগে ভারত তিনটি পাকিস্তানি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। এগুলোর মধ্যে একটি ঘাঁটি ছিল রাজধানী ইসলামাবাদের নিকটে, অপর দুটি ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। যেসব ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, সেগুলোর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)’-এর। এই সংস্থার আওতায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এনসিএর এই বৈঠক পরিস্থিতির গুরুতরতা বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক টেলিভিশন বক্তব্যে বলেন, ভারতের বিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধরা পড়েছে এবং প্রতিহত করা হয়েছে। যেগুলো গন্তব্যে পৌঁছেছে, সেগুলো আমাদের বিমান বা স্থাপনায় বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

ভারতের তরফে এখনও পর্যন্ত সরকারি বিবৃতি না এলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শিগগিরই সাংবাদিকদের ব্রিফ করবে। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের নুর খান, মুরিদ ও শোরকোট ঘাঁটিতে লক্ষ্যভেদ করেছে।

এদিকে জম্মু ও শ্রীনগরের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং সাইরেন বেজে উঠেছে বলে জানিয়েছেন রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদদাতা। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিছু ভবন ও যানবাহন, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

ভারতের দাবি, কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ভারত প্রথম সামরিকভাবে আঘাত হানে পাকিস্তানে।

দুই দেশের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের এই পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। যদিও এই সংখ্যার সঠিকতা আলাদাভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স বা অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী স্থানীয় একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করছি না। আমাদের লক্ষ্য একমাত্র সেসব স্থান, যেগুলো থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে।”

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন সরাসরি সামরিক সংঘাত পুরো অঞ্চলের জন্যই এক ভয়াবহ বার্তা। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুই দেশকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এখন দেখার বিষয়—এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির নিরসনে কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ আসে কিনা, নাকি দুই দেশের এ সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

Leave a Comment

Footer Section