ভারতে হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান:

News Desk

ভারতে হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান: . Dhakain light.com

দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের ছায়া

দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের শঙ্কা আরও ঘনীভূত। ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা এবার ছুঁয়ে গেল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার মঞ্চ। আজ শনিবার পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর তারা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-এর জরুরি বৈঠক ডেকেছে—যা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা।

এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বিশ্লেষকদের মতে, এমন বৈঠক কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়—বরং এটি একটি গভীর বার্তা, যা যুদ্ধ সম্ভাবনার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।

কী ঘটেছে?

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি হামলা শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে। আজ সকালে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যবস্তু ছিল:

  • পাঞ্জাবের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার
  • পাঠানকোট বিমানঘাঁটি
  • কাশ্মীরের উধমপুর বিমানঘাঁটি

এই অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ভারতও পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পাল্টা হামলা চালায়। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের নুর খান, মুরিদ ও শোরকোট ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘাঁটি ছিল ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, অধিকাংশ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলেও তা “গুরুতর ক্ষতি” করতে পারেনি।

কেন এনসিএ বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ?

ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (NCA) মূলত পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা, ব্যবহার নীতি এবং প্রস্তুতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এই সংস্থার জরুরি বৈঠক ডাকা মানেই পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্লেষক আসফান্দিয়ার মির বলেন, “এটি একধরনের পারমাণবিক সতর্কবার্তা, যা পাকিস্তানের ‘প্রথম ব্যবহার’ নীতির ইঙ্গিত দেয়।”

সোজা ভাষায় বললে, এনসিএর বৈঠক হচ্ছে সেই স্তরে যখন একটি রাষ্ট্র তার অস্ত্রাগারের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। এটি শুধু ভারত নয়, পুরো বিশ্বকে বার্তা দেয়—সংঘাত নিয়ন্ত্রণে না আনলে, পারমাণবিক অঘটনের সম্ভাবনা আর ‘অসম্ভব’ বলে ধরে নেওয়া যাবে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য চরম হুমকি বলে বিবেচিত।

এর মধ্যে কাশ্মীরের জম্মু অঞ্চলে পাকিস্তানি হামলায় পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় পুলিশ। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদের আশপাশে বিস্ফোরণ হয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আকাশমুখী ধোঁয়া ও আগুন দেখা যায়।

পাকিস্তান যা বলছে

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল দাবি করেছেন, “আমরা কেবল সেই জায়গাগুলোতে আঘাত হানছি, যেগুলো থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা হয়েছে। বেসামরিক স্থাপনায় আমরা হামলা করছি না।”

তবে ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ড্রোন, গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আগ্রাসন চালাচ্ছে, যা “অঘোষিত যুদ্ধ” বলেই মনে করা হচ্ছে।

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্ত?

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। তবে এবারের মত দুই দেশের রাজধানী লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক—এমন নজির ইতিহাসে বিরল। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত তিন দশকে এই দুই দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ও গভীর সংঘাত।

শেষ কথা

বিশ্ব এখন এক অস্থির সময় পার করছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন, এশিয়া—সবখানে যুদ্ধ ও উত্তেজনার সুর। এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান যদি পারমাণবিক উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়ে, তবে এর প্রতিক্রিয়া শুধু উপমহাদেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না—এটি হবে বিশ্বশান্তির জন্য এক মারাত্মক হুমকি।

এখন দেখার বিষয়, কূটনৈতিক পরিসরে শান্তির পথ খোলা যায় কিনা—নাকি আগামী দিনগুলো আরও অন্ধকারমুখী হয়ে ওঠে।

Leave a Comment

Footer Section