এক সময় আলোচিত ছিলেন রূপ, প্রতিভা ও সাফল্যের জন্য। এখন আলোচনার কেন্দ্রে এক কঠিন অভিজ্ঞতা নিয়ে—যৌন হয়রানির মামলা। মার্কিন অভিনেত্রী ব্লেইক লাইভলি বর্তমানে হলিউডের সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর একটি, তবে এবার সিনেমার জন্য নয়, বরং সাহসিকতার জন্য।
‘অ্যানাদার সিম্পল ফেভার’—এই নামেই সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ব্লেইক লাইভলির নতুন সিনেমা। মুক্তির আগে প্রমোশনে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। অথচ অভিনেত্রীর মুখে শোনা গেল এক অসহায় স্বীকারোক্তি—“জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো কারও সঙ্গে বেশি কথাও বলতে পারছি না।” কথাগুলো বলেন গত সপ্তাহে সেঠ মেয়ার্সের শোতে হাজির হয়ে। কারণ, এখন তিনি শুধু একজন অভিনয়শিল্পী নন, একজন মামলার বাদীও।
ব্লেইক লাইভলি যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন তাঁর সহ–অভিনেতা ও নির্মাতা জাস্টিন বালডোনির বিরুদ্ধে। ২০২3 সালের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘ইট এন্ডস উইথ আস’-এ ব্লেইক ছিলেন প্রধান চরিত্রে এবং প্রযোজক। পরিচালক ছিলেন জাস্টিন বালডোনি। সিনেমার বাইরে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে যত আলোচনার আশা ছিল, সব পাল্টে গেল অভিযোগের পর।

লাইভলির অভিযোগ, সিনেমার শুটিং চলাকালে জাস্টিন বালডোনি তাঁকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, স্ক্রিপ্টের বাইরে যৌনদৃশ্য যোগ করতে চেয়েছেন, এমনকি বিভিন্নভাবে তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন। জাস্টিন অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা মামলা করেন। পরে ব্লেইক আরও একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে হলিউড কার্যত উত্তপ্ত এই মামলা-পাল্টা মামলা নিয়ে।
এই ঘটনার পরপরই জাস্টিন বালডোনির ট্যালেন্ট এজেন্সি তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। সিনেমা প্রযোজনা সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে। বিশেষ করে হলিউডে ‘#MeToo’ আন্দোলনের পর এই মামলা নতুন করে নারীর নিরাপত্তা ও শিল্পী-পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
গতকাল সিএনএন জানিয়েছে, মামলার নতুন আপডেট অনুযায়ী, ব্লেইক লাইভলি ২০২৬ সালের মার্চে আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। দুই পক্ষই জানিয়েছে, আপস করার কোনো পরিকল্পনা নেই। অর্থাৎ মামলা চলবে পূর্ণমাত্রায়।

এই প্রেক্ষাপটে ব্লেইকের ক্যারিয়ার ও জীবনযাত্রা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন টিন সিরিজ ‘Gossip Girl’ দিয়ে। তবে সমালোচকদের মন জয় করেন ‘The Age of Adaline’, ‘The Shallows’, এবং ‘Café Society’ সিনেমাগুলোর মাধ্যমে। ২০১৮ সালে ব্ল্যাক কমেডি ‘A Simple Favor’ দিয়ে সাফল্যের আরেক ধাপে পৌঁছান, যার সিকুয়েল ‘Another Simple Favor’ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে।
তবে সিনেমার প্রচারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মামলাটি। সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট ফেস্টিভ্যালে সিনেমার প্রিমিয়ারে গিয়েছিলেন ব্লেইক। সেখানে বালডোনি ও লাইভলির সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়। এরপর থেকে তাকে কোনো বড় অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না—এমনকি এবারের মেট গালাতেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
তবু আশার খবর আছে। টাইম সাময়িকীর ২০২৫ সালের ‘টাইম ১০০’ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ব্লেইক লাইভলি। সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে, তিনি নিজের মাকে স্মরণ করে বলেন, “আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন জীবনে কীভাবে দাঁড়াতে হয়। তিন সন্তান থাকা অবস্থায় এক সহকর্মীর হাতে প্রাণনাশের শিকার হয়েছিলেন, কিন্তু ন্যায়বিচার পাননি। তিনি বেঁচে ছিলেন, কারণ একজন অপরিচিত নারী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা রেডিওতে বলেছিলেন—সেটাই তাঁর সাহসের উৎস হয়েছিল।”
আজ ব্লেইক লাইভলি নিজেও যেন সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে—একজন নারী, যিনি কেবল নিজের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের নিরাপত্তার জন্যও লড়ছেন। সিনেমার পর্দায় তিনি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেন, আর বাস্তব জীবনে হয়ে উঠেছেন এক বাস্তব গল্পের মুখপাত্র।
মামলার রায় আসতে সময় লাগবে। সিনেমাও আসবে, যাবে। কিন্তু হলিউড যে সত্যিকারের পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে, ব্লেইক লাইভলি সেই পরিবর্তনের সাহসী চেহারা।