বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করে দেবেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তাঁর ফাউন্ডেশন বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই সময়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ তহবিল মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
বৃহস্পতিবার নিজের ব্লগ পোস্টে গেটস বলেন, ‘আমি মারা গেলে কেউ যেন না বলতে পারে—তিনি ধনী অবস্থায় মারা গেছেন।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত গেটস ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন খাতে ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে। আগামী দুই দশকে এ ফাউন্ডেশন আরও ২০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে, যদিও সেটি অর্থনৈতিক অবস্থা ও মুদ্রাস্ফীতির ওপর নির্ভর করবে।
ব্লগে তিনি ১৮৮৯ সালে লেখা অ্যান্ড্রু কার্নেগির বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘দ্য গসপেল অব ওয়েলথ’ উল্লেখ করে বলেন, ধনী ব্যক্তিদের উচিত তাঁদের সম্পদ সমাজে ফিরিয়ে দেওয়া। কার্নেগির সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতিও উল্লেখ করেন: ‘যে ব্যক্তি ধনী অবস্থায় মারা যান, তিনি গ্লানিকর অবস্থায় মারা যান।’
বিল গেটসের মতে, তাঁর নতুন এই প্রতিশ্রুতি দাতব্য কার্যক্রমকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা আগে পরিকল্পনা করেছিলেন যে তাঁদের মৃত্যুর পরও ফাউন্ডেশন বহু বছর ধরে কাজ করবে। তবে এখন তিনি বলছেন, ভবিষ্যতের নতুন ধনীরা আরও দক্ষভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবেন।
নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে গেটস বলেন, ‘এটা জরুরি একটি বিষয়। যদি আমরা ফাউন্ডেশনকে স্থায়ী করার চিন্তা বাদ দিই, তাহলে এখনই অনেক বেশি সাহায্য করতে পারব। আর সেটাই আমার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করলেও বিল গেটসের হাতে শত কোটি ডলার থেকে যাবে। তিনি বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮০ কোটি ডলার। গেটসের ব্লগে প্রকাশিত একটি টাইমলাইনে দেখানো হয়েছে, কিভাবে এই সম্পদ ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।
গেটস বলেন, ফাউন্ডেশনের মূল তহবিল থেকেই ২০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। তাঁর মতে, মায়েরা ও শিশুদের প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা, ম্যালেরিয়া ও হাম নির্মূল, এবং দরিদ্র মানুষদের উন্নয়নের পথ দেখানো ফাউন্ডেশনের তিনটি প্রধান লক্ষ্য।
তিনি আরও জানান, বিনিয়োগকারী ও মানবহিতৈষী ওয়ারেন বাফেটের অনুপ্রেরণায় তিনি এই দান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গেটস ফাউন্ডেশন নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এই দাতব্য প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত প্রভাব ফেলতে ব্যবহৃত হয়।
গেটস বলেন, বিশ্বের ধনী দেশগুলো দরিদ্র জনগণের পাশে থাকবে কি না, তা অনিশ্চিত। তবে গেটস ফাউন্ডেশন এমন সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যা মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর হবে।
নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে ইলন মাস্ককে দায়ী করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সাহায্য কমানোয় শুধু কিছু শিশু নয়, বরং লাখ লাখ শিশুর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি ইলন মাস্ককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি চাই, তিনি গাজা প্রদেশের সেই শিশুদের সঙ্গে দেখা করুন, যারা এখন এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে।’
এ নিয়ে বিবিসি ইলন মাস্কের মন্তব্য জানতে চেয়েছে, তবে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গেটস ফাউন্ডেশন বিবিসির দাতব্য প্রতিষ্ঠান “বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন”-এর অন্যতম দাতা। তবে এই প্রতিষ্ঠান বিবিসির সংবাদ বিভাগ থেকে পৃথকভাবে পরিচালিত হয়।