আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘কয়েকটি কথা’

News Desk

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘কয়েকটি কথা’. Dhakainlight.com

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের লাগাতার অবস্থানের মধ্যে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। বৃহস্পতিবার রাতে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপি নেতা-কর্মীদের অবস্থান এবং আজ শুক্রবার বড় জমায়েতের ঘোষণা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন—‘কয়েকটি কথা’ শিরোনামে।

পোস্টে মাহফুজ আলম দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে যে ছাত্রদের আপত্তি ছিল, তা পুরোপুরি মিথ্যা। তিনি লেখেন, “ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিলেন স্বভাবতই।”

তিনি আরও জানান, ক্যাবিনেটে একজন উপদেষ্টা ‘ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের’ উদাহরণ টেনে আইনি বিচারের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তির পক্ষে এখন কিছু কর্মী অবস্থান নিচ্ছেন এবং ছাত্রদের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন মাহফুজ। তিনি বলেন, “উনার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোন লাভ নেই।”

মাহফুজ আলম জানান, আওয়ামী লীগের বিচারের প্রভিশন অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন। সেই উপদেষ্টার সঙ্গে গতকাল বিকেলে তাঁর কথা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মাহফুজ লিখেছেন, “দুজন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন।”

ঘোষণাপত্র ইস্যুতে জটিলতা নিয়েও মাহফুজ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের দল গঠনের প্রাক্কালে এক ঘোষণাপত্র নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এখন সেই ঘোষণাও প্রকাশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “আমরা নির্বাচন পেছাতে চাই না। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্ব্বাচন হবেই।”

ছাত্রদের স্বাধীন অবস্থান নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন মাহফুজ। তিনি বলেন, “আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারে না বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি, তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, আগস্ট থেকে ছাত্ররা সব সিদ্ধান্তই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছে এবং সর্বপ্রথম পরামর্শ নিয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই। কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পায়নি—“ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!”

সবশেষে মাহফুজ আলম জানান, তারা এখনও বিশ্বাস করতে চান যে আওয়ামী লীগের প্রধান দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালন করবেন। তিনি বলেন, “উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি।”

ছাত্রদের মনোভাব স্পষ্ট করে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, “আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক।”

তিনি আহ্বান জানান: “ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এ প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। এ প্রজন্ম এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।”

এই বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment

Footer Section