বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, সরকারের চলমান উদ্যোগ ও নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশের মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। তিনি মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয় এবং সেটিই হবে সবার জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত “ব্যাংকার এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলা”–র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চার দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপাই আর অন্যদিকে বলি মূল্যস্ফীতি কমছে না, তাহলে সেটা বাস্তবসম্মত নয়। তাই আমাদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। ধীরে হলেও মূল্যস্ফীতি কমে আসছে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এপ্রিল মাসের সর্বশেষ তথ্যমতে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশে এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের কিছু ওপরে রয়েছে।
গভর্নর আরও বলেন, “আগে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ, এখন তা অনেকটা কমেছে। এটা ইতিবাচক সংকেত। তবে আমাদের আরও সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতিকে টেকসইভাবে কমিয়ে আনার জন্য নীতির ধারাবাহিকতা ও বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ।”
নারী উদ্যোক্তা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়েও বক্তব্য দেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “নারীদের সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও বাস্তবে তাঁরা অনেক বাধার মুখে পড়েন, বিশেষ করে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সময়। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীদের দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি জানান, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ বাড়াতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে, নতুন টাকা তৈরি করে নয়। একই সঙ্গে তাঁদের আর্থিক সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং এই প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের আরও এগিয়ে নিতে এসএমই কার্যক্রমকে বিস্তৃত করা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”
চার দিনব্যাপী এই এসএমই মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা তাঁদের তৈরি পণ্য প্রদর্শন করছেন। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে শেষ দিনে ছয়জনকে সম্মাননা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই মেলা নিয়মিতভাবে আয়োজন করলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত চার বছর মেলার আয়োজন বন্ধ ছিল।
এই মেলা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সেটি এই আয়োজন থেকেই স্পষ্ট।
আরও খবরের জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন।
4o