কাশ্মীর সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পূর্ণ অনুমোদন দিয়েছে ইসলামাবাদ। আজ বুধবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের কথা স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জবাবে সময়মতো এবং নিজেদের বিবেচনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত যে ‘উসকানিমূলক ও কাপুরুষোচিত’ হামলা চালিয়েছে, তাতে অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৫০ জনের মতো আহত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের সেই হামলায় তাদের ১০ জন নাগরিক নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান এবং বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারতীয় বিমানগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করার চেষ্টা করলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সাম্প্রতিক হামলার সূত্রপাত হয় ২৬ এপ্রিল, যখন কাশ্মীরের পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায় বহু প্রাণহানি ঘটে। ভারত সেই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠীকে দায়ী করে এবং পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর ভারত পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসলামাবাদের মতে, সেই হামলায় শুধু সাধারণ মানুষই নিহত হননি, মাসুদ আজহারের পরিবারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, মুজাফফরাবাদ ও পাঞ্জাবে ভারতীয় হামলায় মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিলাল মসজিদের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, হামলাগুলো রাতের অন্ধকারে চালানো হয়, যাতে বেসামরিক লোকজন প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পর্যন্ত পাননি।
বর্তমান এই পরিস্থিতিকে দুই দেশের মধ্যে আরও বড় সংঘাতে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা। দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, বরং পাল্টাপাল্টি হুমকি এবং হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।